পপুলার২৪নিউজ,ডেস্ক:
আপনি কি আপনার সমবয়সীদের তুলনায় শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন? হাঁটতে গেলে বা দৌড়াদৌড়ি করার সময় সহজে হাঁপিয়ে উঠেন, সিড়িঁ বেয়ে ওপরে উঠতে গেলে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে যায়, তার সঙ্গে বুক ধড়ফড়, বুকে চাপ বা ব্যথা অনুভব করেন?
পেটভরে খাওয়ার পর, বিশেষ করে রাতে বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন? মাঝে মাঝে রাতে শুকনো কাশি অথবা শ্বাসকষ্টের জন্য ঘুম ভেঙে যায়? শরীর ভার ভার মনে হয়, কাজকর্মে অনীহা দেখা দিয়েছে, হাত-পা ও মুখে ফুলা ফুলা ভাব ধরেছে? শারীরিক যোগ্যতা কমার সঙ্গে সঙ্গে যৌন দূর্বলতা দেখা দিয়েছে? ঘন ঘন ঠাণ্ডা জ্বর বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন?
হজমে গোলমাল দেখা দিয়েছে? খাদ্য গ্রহণে অনীহা বা ক্ষুধামন্দা দেখা দিয়েছে? প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেছে? বল প্রয়োগের কাজ করতে গেলে মাথা হালকা অনুভূত হয় অথবা চোখ অন্ধকার হয়ে মাথা ঘোরাতে থাকে?
হৃৎপিণ্ড পাম্পের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। বিশ্রাম কালীন সময়ে আপনার শারীরিক চাহিদা সর্বনিন্ম পর্যায়ে থাকায় শরীরে রক্ত প্রবাহের চাহিদাও সর্বনিন্ম পর্যায়ে থাকে, ফলশ্রুতিতে হৃৎপিণ্ডকেও সর্বনিন্ম পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়।
তবে যখন কোনো ব্যক্তি তার শারীরিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করে তখন শারীরিক চাহিদা পূরণে হৃৎপিণ্ডকেও অধিক পরিমাণ কাজ করতে হয়, অধিক রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শারীরিক চাহিদা মেটাতে হয়। সর্বোচ্চ কায়িকশ্রম যেমন-১০০ মিটার রেস বা ক্রিকেট খেলায় দুই উইকেটের মধ্যে দৌড়ানোর সময় হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্পের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাই দেখা যাচ্ছে যে, আপনি যখন কায়িকশ্রমের মাত্রা বৃদ্ধি করেন তখন তার সঙ্গে আনুপাতিক হারে আপনার হৃৎপিণ্ডকেও তার গতি বৃদ্ধি করতে হয়।
যখন আপনার হৃৎপিণ্ড অধিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন আপনার শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় হার্টের যোগ্যতা কমতে থাকলেও আপনি তা অনুভব নাও করতে পারেন। কারণ তখন পর্যন্ত আপনার হৃৎপিণ্ড আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্মসম্পাদনে পুরোপুরি সহায়তা করতে সক্ষম হয়।
ধীরে ধীরে হৃৎপিণ্ড আরও দুর্বল হয়ে গেলে প্রথমে আলোচিত উপসর্গ শরীরে পরিলক্ষিত হয়, তার মানে হল হৃৎপিণ্ড তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। বহুবিধ কারণে হার্ট দুর্বল হতে পারে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু কারণকে প্রাধান্য দেয়া হয়। হাইপ্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের ফলে হৃৎপিণ্ডের কাজের চাপ বাড়ে। অধিক চাপে কাজ করতে করতে এক সময় হার্ট অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে হার্ট দুর্বল হতে থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ডায়াবেটিস রোগ রক্তনালীর প্রভূত ক্ষতিসাধন করে থাকে, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর। তাই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যমান থাকলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার জন্যে হার্ট দুর্বল হয়ে যায়, এ ক্ষেত্রে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখাই চিকিৎসা গ্রহণের মূল লক্ষ্য।
রক্তনালীতে কোলেষ্টেরল জমা হয়ে হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার জন্যে হার্ট দুর্বল হয়ে থাকে। কোলেষ্টেরল নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস, পরিমিত মাত্রায় কায়িকশ্রম, ক্ষেত্রবিশেষে বাইপাস অপারেশন ও রিং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করে হার্টকে দুর্বলতা থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
ইতিপূর্বে যদি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন যার লক্ষণসমূহ সাধারণভাবে বুকে তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অত্যাধিক ঘেমে যাওয়াসহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে থাকে।
যারা হার্টের রক্তনালীতে ইতিপূর্বে এক বা একাধিকবার রিং পরেছেন বা বাইপাস অপারেশন করেছেন বা উভয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন।
যারা হৃৎপিণ্ডের ভাল্বের সমস্যায় ভুগছেন অথবা কৃত্রিম ভাল্ব প্রতিস্থাপন করেছেন, যারা জন্মগত হৃদরোগে ভুগছেন, কোনোরূপ নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হৃৎপিণ্ড দুর্বল হতে পারে। আরও যেসব কারণে এরূপ অবস্থা হতে পারে যেমন-থাইরয়েড হরমোন জনিত সমস্যা ও রক্তশূন্যতা। সন্তান জন্মদান পরবর্তী অবস্থায় মহিলাদের মধ্যে হৃৎপিণ্ড দুর্বল হওয়ার প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয়।
