সাইদ রিপন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, এখন থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাদের পদায়ন গ্রাম অঞ্চলে তাদের গ্রামেই থাকতে হবে। এজন্য তাদের বসবাসের জন্য উপযোগি করে গ্রামের পরিবেশ তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনেকে ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৬ হাজার ৬২২ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা গ্রামে থাকতে চান না। আবার তারা গ্রামে থাকলেও তাদের পরিবার থাকে ঢাকায়। এ অবস্থায় জনগণকে সঠিক সেবা দিতে পারেন না। এজন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার নিয়ে গ্রামের কর্মস্থলে থাকার পরিবশে তৈরি করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, গ্রামে এখন থেকে যেসব ভবন তৈরি হবে, সেগুলো যেন খোলামেলা হয়। যেন দর্শনার্থীরা সহজেই হাঁটাচলা করতে পারেন, এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এছাড়া যেসব পুকুর রয়েছে, সেগুলো কোনোভাবেই ভরাট করা যাবে না। প্রয়োজন হলে নতুন করে পুকুর কাটতে হবে। আগুন লাগলেই যেন সেই পুকুরের পানি ব্যবহার করা যায়।
এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কোনো প্রকল্পের জন্য কৃষি জমি বা গরীব মানুষ ও বর্গাচাষীদের জমি নেওয়া যাবে না। একান্তই যদি জমি নিতে হয়, তাহলে জমির দাম তিনগুণ দেওয়ার পাশাপাশি প্রকল্প শুরুর আগেই তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া প্রতিবছর নদীগুলো ড্রেজিং করারও নিদেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, সরকার রেলপথকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই নির্দেশনা দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে দেশের সব রেলপথকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করতে হবে। অতীতে যারা রেলকে অবহেলা করেছিলেন, তারা অন্যায় করেছে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে: আখাউড়া-সিলেট সেকশনের মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজ রেললাইনে রূপান্তর প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৪৪ কোটি টাকা, মাগুরা- পশ্রীপুর জেলা মহাসড়ক বাঁক সরলীকরণসহ সম্প্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের নতুন কার্যালয় ভবন ও অডিটরিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৩৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ।
মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, বিসিএসআইআর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ইনডোর ফার্মিং গবেষণা সংক্রান্ত সুবিধা স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার ঘুঘুমারী থেকে ফুলুয়ার চরঘাট ও রাজিবপুর উপজেলা সদর (মেম্বার পাড়া) থেকে মোহনগঞ্জ বাজার পর্যন্ত এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে বাঁচাতে বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশন সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মো. ফায়জুল্লাহসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।
