মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এক বড় আকারের অভিযানে চালাচ্ছে সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে বহু লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে- যাদের বড় অংশই বাংলাদেশি। মালয়েশিয়াজুড়ে এ অভিযান চালানো হলেও গ্রেপ্তারকৃতদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনো জানাতে পারেনি সেখানকার বাংলাদেশ মিশন।
তবে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউ স্ট্রেইটস টাইমস অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের প্রথম দিন এক হাজার ৩৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫১৫ জনই বাংলাদেশি শ্রমিক। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার রয়েছেন ১৩৫ জন। গ্রেপ্তারকৃত বাকিরা অন্যান্য দেশের নাগরিক।
মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের বৈধতা পাওয়ার জন্য ই-কার্ড বা এনফোর্সমেন্ট কার্ড কর্মসূচিতে রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা শেষ গত ৩০ জুন। তারপর থেকেই অবৈধ শ্রমিকদের গ্রেপ্তারের এ অভিযান শুরু হয়।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রমবিষয়ক কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম জানান, সপ্তাহের ছুটি চলার কারণে গ্রেপ্তারকৃতদের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানতে পারেননি তারা। তবে সে দেশে অবৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা ও তাদের বৈধ হবার কর্মসূচি রয়েছে এবং সেটি চলমান রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সেই কর্মসূচি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে বলে জানান তিনি। যারা বৈধভাবে বিমানে করে মালয়েশিয়ায় ঢুকেছিল তাদের জন্য এ কর্মসূচি।
এ ছাড়া যেসব কর্মীর কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নাই, যারা অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল তাদের জন্য সহায়ক কর্মসূচি ছিল ই-কার্ড কর্মসূচি, সেটাই শেষ হয়েছে। আর সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী মালয়েশিয়ার সরকার অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে- এমন একটি সংগঠনের কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ বলেন, ‘যারা বৈধতার সুযোগ নিতে পারেনি তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ‘ তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে, এ কারণে গ্রেপ্তারকৃতদের সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে এই সংখ্যা অনেক এবং বৈধতার সুযোগ বাংলাদেশিরা বেশি নিলেও গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তারাই বেশি বলে মনে হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় গত তিন বছর ধরে বসবাসরত এক বাংলাদেশি শ্রমিক জানান, সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যেই কাজ করছেন তারা। অনেকে লুকিয়েও রয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থী হিসেবে মালয়েশিয়ায় আসলেও এখন অবৈধভাবে সেখানে বাস করছেন। কেন বৈধ হতে পারেননি তার কারণ হিসেবে এ বাংলাদেশি জানান, এজেন্সির কাছে ধরা খেয়ে অনেকে বৈধ হতে পারেনি। আর যাদের কম্পানি বা কলেজ থেকে ব্ল্যাকলিস্ট করে দিয়েছে তারাও বৈধ হতে পারেনি।
ওই বাংলাদেশি শ্রমিক আরো জানান, মালয়েশিয়ার সরকার আরেকটা সুযোগ দিলে সেটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে অনেকে। তবে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আবেদনের সময়সীমা নতুন করে বাড়ানো হবে না।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ছয় লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত আবেদন করেছেন এক লাখ ৬১ হাজার ৫৬ জন, অর্থাৎ মাত্র ২৩ শতাংশ।
