ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের বিভিন্ন কক্ষে জোর করে ছাত্রলীগের কর্মী তোলা নিয়ে রাতভর তুলকালামের ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে হল প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আ জ ম শফিউল আলম ভূইয়া তদন্ত কমিটি গঠনের কথা নিশ্চিত করেছেন।
প্রাধ্যক্ষ জানান, হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ আসিফ হোসেন খানকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী আবাসিক শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক ও প্রয়াস রায়।
শফিউল আলম ভূইয়া বলেন, আজ সন্ধ্যায় আবাসিক শিক্ষকদের বৈঠক হবে। যাদের বিভিন্ন কক্ষে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাদের ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন কক্ষে ছাত্রলীগের কর্মীদের তুলে দিতে শুরু করে সংগঠনটি। আবাসিক শিক্ষকেরা বাধা দিতে গেলে নেতা কর্মীরা শিক্ষকদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে প্রাধ্যক্ষের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। মারধরের শিকার হন এক সাংবাদিক।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিজয় একাত্তর হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের আসনবিন্যাস হল প্রশাসনই করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র এই হলেই আসনসংকটকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো রাজনীতি করতে পারে না। তারা চাইলেই হলের বিভিন্ন কক্ষে কর্মী তুলতে পারে না। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অনেকবার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের কঠোরতায় তা সম্ভব হয়নি।
হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত ১২টার দিকে বিজয় একাত্তর হলের উত্তর পাশের যমুনা ব্লকের প্রত্যেক কক্ষে এক-দুজন করে শিক্ষার্থী জোর করে তুলে দেয় ছাত্রলীগ।
খবর পেয়ে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক হলে ছুটে আসেন। পরিস্থিত সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের ধাওয়া দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রলীগের কর্মীরা একজন আবাসিক শিক্ষককে ‘শিবির’ বলেও ধাওয়া করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী ও ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান প্রাধ্যক্ষের কক্ষে যান। তাঁরা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ডেকে কথা বলেন। হলের ছাত্রদের নিজ নিজ কক্ষে ফেরত যেতে নির্দেশ দিতে বলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। যেসব কক্ষে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ছাত্র তোলা হয়েছে, তাঁদের সবাইকে ফিরিয়ে আনতে বলেন।
এ অবস্থায় ভোররাত চারটা পর্যন্ত হলের ভেতরের মাঠে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন।
হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ফকীর রাসেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদারের ভাষ্য, আসন না পাওয়া নতুন শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন কক্ষে উঠেছেন। তাঁদের কিছু করার ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, যাঁরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
