বান্দরবান প্রতিনিধি,পপুলার২৪নিউজ:
বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পাবার জন্যে ছুটে এসেছিল এনু চিং মারমা, শিপ্রা ত্রিপুরা এবং চিনু চাকমাসহ আরো অনেক শিশু। বয়স এখনও ৫ এর নিচে।
পড়ার ইচ্ছা প্রাক-প্রাথমিকে। তাই মায়ের হাত ধরে এসেছিল প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে বই নিতে। কিন্তু বই এসে পৌঁছায়নি জেলা সদরে। তাই বই না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেছে ওরা
বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট অডিটোরিয়ামে বই নিতে এসে বঞ্চিত হওয়া শিশুদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা অনুযোগ করে- “সবার বই আসছে। সবাই বই পাচ্ছে। তাহলে আমাদের বই আসবে না কেন?”
সারাদেশে সব শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনে বিনা মুল্যের নতুন বই তুলে দেবার সরকারি সিদ্ধান্ত থাকা স্বত্ত্বেও দায়িত্বরত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যে মুদ্রিত বইয়ের একটিও বান্দরবানে পৌঁছেনি। সে কারণে প্রাক প্রাথমিকের বই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া যায় নি।
তবে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। তিনি অবিলম্বে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই নিয়ে আসার জন্যে শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা জানান, প্রাক প্রাথমিক শ্রেনীর জন্যে মোট ১১ হাজার ৩১০ সেট বইয়ের চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। শনিবার ৩১ ডিসেম্বর রাতে শিক্ষকদের জন্যে কয়েকটি ‘পাঠ সহায়ক বই’ এসেছে। তবে মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা এবং গারো মাতৃভাষায় পাঠ দানের কোন বই রবিবার পর্যন্ত না পৌঁছার কারণে প্রাক প্রাথমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া যায়নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের চাহিদা অনুযায়ী মারমা ভাষায় ৪২৩৫ সেট, ত্রিপুরা ভাষাভাষিদের জন্যে ৮৬৫ সেট, চাকমা শিশুদের জন্যে ২০৮ সেট, গারো/তঞ্চঙ্গ্যা শিশুদের জন্যে ৭৩ সেট এবং অন্যান্যদের জন্যে ৬৯২৯ সেট বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেনীতে মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা বা গারো শিশু ভর্তি হবার সম্ভাবনা যথাযথ কোন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে না নিয়ে বা এ বিষয়ে কোন জরিপ ছাড়াই দায় এড়াতে তড়িঘড়ি আন্দাজের উপর ভিত্তি করে একটি কল্পিত চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে। এ কারণে বই বিতরনের নির্ধারিত দিনের আগে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় রচিত প্রাইমারি বই না পৌঁছলেও জেলা বা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে নি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের একটি সুত্র জানায়, বর্তমানে বান্দরবান জেলায় ৩৪৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩ দফায় ২১৯টি পুরাতন স্কুলে প্রাক প্রাথমিক শেনীর জন্যে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১২৪টি বিদ্যালয়ে শিক্ষক না থাকায় এসব বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক শ্রেনি চালু করা যায় নি।
সুত্র জানায়, ইউএনডিপি পরিচালিত ৮৩টি বেসরকারি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের প্রক্রিয়া এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে প্রথম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী, কারিগরি এবং মাদ্রাসার ছাত্ররা বছরের প্রথম দিনে বিনামুল্যের নতুন বই পেয়ে আনন্দে নাচতে থাকে। বই বিতরন অনুষ্ঠানে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা বক্তব্য দেন। তারা সরকারের কালজয়ী পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলেন, এতে শিক্ষার হার বেড়ে যাবে এবং কমে যাবে ঝরে পড়ার হার।
