নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদনের বিষয়ে শুনানি পিছিয়ে আগামিকাল বুধবার (১০ জুলাই) ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হলে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন খাজা তানভীর আহমেদ।
অন্যদিকে, দুদকের পক্ষে ছিলেন মোহাম্মদ খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, আমরা একটি সম্পূরক আবেদন করেছিলাম, যেখানে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ৫ শতাংশ টাকার জন্য শ্রমিকদের দায়ের করা মামলায়, অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্তে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি। ওই সংক্রান্ত আবেদন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৭ জনের পক্ষে করা আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত বিষয়টি শোনার জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক আদালতকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ মামলায় শুনানি করবেন। তাই তিনি সময় আবেদন করেন, তখন আদালত আগামীকাল ১১টায় শুনানির জন্য বলেছেন।
এর আগে সোমবার (৮ জুলাই ) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়। আবেদনে অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে গত ১২ জুন গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের লভ্যাংশ আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আইনজীবী জাফরুল হাসান শরীফ, আইনজীবী মো. ইউসুফ আলীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। আগামী ১৫ জুলাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।
এর আগে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারীদের সংরক্ষিত ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের ফলে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
গত ১২ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এর আগে ২ জুন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে শুনানি করেন। অন্যদিকে, ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের পক্ষে তাদের আইনজীবী অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১২ জুন দিন ধার্য করেন।
২০২৩ সালের ৩০ মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার। দুদকের মামলায় আসামি ছিলেন ১৩ জন। চার্জশিটে নতুন একজন আসামির নাম যুক্ত হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করে মামলার বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে অনুষ্ঠিত ১০৮তম বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় হিসাব খোলা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনা লভ্যাংশ বিতরণের জন্য গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সেটেলমেন্ট অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি হয় ওই বছরের ২৭ এপ্রিল।
