নিজস্ব ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থা রুগ্ন ও দুর্নীতিগ্রস্ত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অরল্যান্ডো শহরে আয়োজিত কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সিপিএসি কনফারেন্সে এক ঘণ্টা ধরে বক্তব্য দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এর বেশিরভাগ সময় ধরেই ছিল সর্বশেষ নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতির প্রমাণহীন অভিযোগ। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের খুবই রুগ্ন ও দুর্নীতিগ্রস্ত একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা রয়েছে। এটা অবিলম্বে সমাধান করতে হবে। গত নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছিল।’
ট্রাম্পের অভিযোগ, এতো কিছুর পরও সুপ্রিমকোর্টসহ অন্যান্য আদালত এ বিষয়ে কোনো কিছুই করতে চায়নি। এসময় ‘তুমি জয়লাভ করেছো! তুমি জয়লাভ করেছো!’ বলে সামনে থাকা জনতা চিৎকার শুরু করে।
প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসে এসব কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনে জালিয়াতির সেই পুরোনো প্রমাণহীন অভিযোগ তোলার পাশাপাশি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধেও শানিয়েছেন আক্রমণ। এছাড়া সর্বশেষ নির্বাচনে নিজের জয়ের ব্যাপারে আবারও সেই একই দাবি তুলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতা করার বিষয়েও।
‘হ্যালো সিপিএসি, তোমরা আমাকে মিস করেছো?’, বলে রোববার কনফারেন্সে বক্তব্য শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘গর্বিত ও পরিশ্রমী আমেরিকান দেশপ্রেমিকদের জন্য আমাদের আন্দোলন মাত্র শুরু হলো। শেষে আমরাই জয়লাভ করবো, আমরাই জয়লাভ করবো।’
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, কনফারেন্সে বক্তব্য দেওয়ার সময় গত নভেম্বরের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হার মানতে আবারও অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প। এসময় প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন তিনি এবং একইসঙ্গে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও লড়াইয়ে নামার আভাস দেন তিনি।
সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে বাইডেনের নীতির সমালোচনা করে সাবেক এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তারা হোয়াইট হাউসের মর্যাদাকে হারিয়ে ফেলেছে। কে জানে, কে জানে…, তাদেরকে তৃতীয়বারের মতো পরাজিত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি আমি।’ ট্রাম্পের ধারণা, ২০২০ সালের নির্বাচনে তিনিই জয়লাভ করেছেন।
জো বাইডেনের ক্ষমতাগ্রহণের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের প্রতীক ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে সশস্ত্র হামলা ও সহিংসতা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। এতে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত হয় পাঁচ জন। সমর্থকদের চালানো এই হামলায় ট্রাম্প উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাসও গড়েছিলেন তিনি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র দু’জন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প লজ্জাজনকভাবে দু’বার অভিশংসিত হন।
গত ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা
তবে সিনেটে চূড়ান্তভাবে অভিশংসনের হাত থেকে রক্ষা পান ট্রাম্প। সিনেটে রেহাই পেলেও একদল রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন এবং ক্যাপিটলে হামলায় সমর্থকদের উস্কানির অভিযোগে নিজ দলের ভেতর থেকেই তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হন তিনি।
তবে রোববারের ভাষণে রিপাবলিকান পার্টি ঐক্যবদ্ধ আছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, নিজ দলের বাইরে গিয়ে তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা তার নেই। অবশ্য গত কয়েক মাসে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে নিজের উপদেষ্টাদের সঙ্গে ট্রাম্প আলোচনা করেছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, ‘আমরা নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করছি না। আমাদের রিপাবলিকান পার্টি আছে। অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় দলটি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমি নতুন কোনো দল (নিয়ে কাজ) শুরু করছি না।’
রয়টার্স জানিয়েছে, স্ট্র পোলের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে- সিপিএসি কানফারেন্সে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করতে ভোট দেবেন। অন্যদিকে ২১ শতাংশ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর রন ডেসান্টিস। তবে প্রার্থিতায় ট্রাম্প না থাকলে মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড়ে ডেসান্টিসের পক্ষে এই ভোটের হার ৪৩ শতাংশ। আর অন্য যেসব সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা এক অংকের ঘরে।
তবে সবাই ট্রাম্পকে সমর্থনও করেননি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের আলাদা আরেকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয় যে- ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের কী প্রার্থী হওয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৮ শতাংশ বলছেন- পরবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রার্থী হওয়া উচিত; অন্যদিকে এর বিরোধিতা করছেন বা কোনো মতামত নেই এমন মানুষের সংখ্যা ৩২ শতাংশ।
বক্তব্যে উত্তরসুরী জো বাইডেনের সমালোচনা করতেও ছাড়েননি গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের দাবি, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মাসটি আধুনিক ইতিহাসের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বিপর্যয়কর ভাবে কাটিয়েছেন জো বাইডেন।’
অবশ্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রথম মাসের কাজে ৫০ শতাংশ আমেরিকান নাগরিক সন্তুষ্ট বলে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
এদিকে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন কিংবা হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করবে না বলে আগেই জানানো হয়েছিল। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিপিএসি সম্মেলনে ট্রাম্প কী বলবেন, না বলবেন; সে ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে আমরা কিছুই ভাবছি না।’
সূত্র: রয়টার্স
