মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রীকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

মুজিব উল্ল্যাহ্ তুষার :

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন
চৌধুরীর স্ত্রী ও নগর মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী  হাসিনা মহিউদ্দিনকে দলের
আয়োজিত একটি সভার মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে
চট্টগ্রাম মহিলা আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
সোমবার (২৮ অক্টোব) বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এই বিক্ষোভ
সমাবেশ শুরু হয়।
হাসিনা মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মা। গত রোববার সকালে নগরীর পাঁচলাইশে একটি
কমিউনিটি সেন্টারে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৬টি জেলার সাংগঠনিক
প্রতিনিধি সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী
হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চে ওঠান। পরে তাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। ওই
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক
পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তবে ওই ঘটনার সময় ওবায়দুল কাদের
অনুষ্ঠানে পৌঁছাননি।

হাসিনা মহিউদ্দিনকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের
একাংশের নেতাকর্মীরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া তাদের মধ্যে ব্যাপক
ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সভা চলাকালীন সময়ে তারা নগর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই
নেতা মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কাছে গিয়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা লীগের
সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। মঞ্চ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী তাকে হাতের ইশারায় মঞ্চে আসার জন্য ডাকেন। তখন তাকে
মঞ্চে পৌঁছে দেন নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর। মঞ্চে ওঠার
পর হাসিনা মহিউদ্দিন অতিথিরদের দ্বিতীয় সারিতে গিয়ে বসেন। সেখানে বসার প্রায়
১৫ মিনিট পর সভার সঞ্চালক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গিয়ে তাকে চেয়ার ছেড়ে উঠে
যেতে বলেন।

এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে নেমে যাবার নির্দেশ দেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। হাসিনা
মহিউদ্দিন এরপরও বসে থাকলে মেয়র আবারও গিয়ে তাকে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে বলেন।
তখন তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। সেখান থেকে উঠে গিয়ে সভার পুরোসময় মঞ্চের নিচে
ডানপাশে থাকা একটি চেয়ারে বসে থাকেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিনা মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে নগর আওয়ামী
লীগের কেউ না কেউ ডেকেছে বলেই আমি মঞ্চে উঠেছিলাম। নগর আওয়ামী লীগ সভা আহবান
করেছে। সেখানে কি আমি জোর করে উঠতে পারব ? ঘটনা যা হওয়ার হয়েছে, সেটা নিয়ে আমি
কিছুই বলতে চাই না।’
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, ‘উনি (হাসিনা মহিউদ্দিন) নিজ থেকে মঞ্চে
উঠেননি। মাহতাব ভাই চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে উনাকে মঞ্চে ডেকে নেন। সবাই এটা
দেখেছেন। এরপরও উনাকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে ভালো
লাগেনি। মহিউদ্দিন ভাই বেঁচে নেই। উনার স্ত্রী কিংবা উনার পরিবারের জন্য আমরা
যারা মহিউদ্দিন ভাইয়ের কর্মী, আমাদের আবেগ আছে। সেজন্য আমি মেয়র মহোদয়ের কাছে
গিয়ে বলেছি, কাজটি শিষ্টাচার বর্হিভূত হয়েছে। একজন কর্মী যেভাবে নেতার কাছে
গিয়ে বলেন, আমি সেভাবে বলেছি। এখানে ঝগড়া-সংঘাতের কোনো বিষয় নয়।’

হাসিনা মহিউদ্দিনকে ছাড়াও আবদুচ ছালাম এবং আহমেদুর রহমান সিদ্দিকীকে মঞ্চ থেকে
নামিয়ে দেন মেয়র। এতে তারাও দর্শক সারিতে গিয়ে বসে। তবে কিছুক্ষণ পর দুজনই
অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে চলে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, এম এ ছালাম সাহেব
মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। খবর এসেছে হাসিনা মহিউদ্দিনও আওয়ামী
লীগের মনোনয়ন চাইবেন। সেজন্য সম্ভবত আ জ ম নাছির উদ্দীন সাহেব তাদের
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবছেন।

প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বন্ধু হিসেবে পরিচিত আহমেদুর রহমান
সিদ্দিকী একাধিকবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দায়িত্বে
ছিলেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে টানা ১৭ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা
মহিউদ্দিন ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মারা যান। মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদের
সমবেদনা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসেছিলেন তার বাসায়।

মহিউদ্দিনের ছেলে নওফেল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শিক্ষা
উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন। গত সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রথমবারের মতো
সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।
সভায় উপস্থিত নেতাদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন, মঞ্চে নগর আওয়ামী লীগের
সম্পাদকমণ্ডলীর অনেকে উপস্থিত ছিলেন। মেয়র তাদের নেমে যাওয়া নির্দেশ দেননি।
মেয়রের অনুসারী সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ হাসনী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক
নোমান আল মাহমুদকে মঞ্চে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। তবে তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে আজ সোমবার ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তাকে (হাসিনা
মহিউদ্দিন) মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।

কাদের আরো বলেন, চট্টগ্রাম থেকে চলে আসার সময় বিমানবন্দরে বিষয়টি জানতে
পেরেছি, আগে জানলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হিসেবে অবশ্যই তাঁকে সেই সম্মান
দিতাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমা হলেন তিশা, বাবা অপূর্ব!
পরবর্তী নিবন্ধকোহলি-আনুশকার দীপাবলি উদযাপনের ছবি ভাইরাল