দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে নরসিংদীর লটকন


আহমেদ জিয়া, নরসিংদী প্রতিনিধি: পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ লটকন ফল বর্তমানে নরসিংদীর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখছে। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব বাড়ছে লটকনের। তাছাড়া কম মুনাফায় অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকদের মাঝে এ ফল চাষের আগ্রহ বাড়ছে।

স্থানীয় কৃষক ও কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে প্রথম বেলাবো উপজেলার লাখপুর গ্রামে লটকনের আবাদ শুরু হয়। এরপর থেকে বেলাবো ও শিবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লালমাটির এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটতে থাকে। দিন দিন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ লটকনের চাহিদা বাড়তে থাকে।

বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই লটকনের চাষ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বেলাবো ও শিবপুর উপজেলায় গত ৩০ বছরে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের প্রসার ঘটেছে। এখন দুই উপজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি লটকন। লটকন চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধানের পথ খুজে পেয়েছেন অনেকেই।

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, শিবপুর ও বেলাবো উপজেলার লাল রংয়ের উচু মাটিতে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটিও লটকন চাষের উপযোগী। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রধান কান্ডগুলোতে ছড়ায় ছড়ায় ফলন হয় লটকনের।

নরসিংদীর লটকন খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় এর কদর বেড়েছে। ২০০৮ সাল থেকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে নরসিংদীর এই সু-স্বাদু ফল। মৌসুমী এ ফলের কেনাবেচাকে ঘিড়ে জেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল ও শিবপুর উপজেলা সদরে বসছে লটকনের বাজার।

প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারী ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন লটকন। পর্যায়ক্রমে হাত বদল হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে এসব লটকন রপ্তানি হচ্ছে বিদেশের বাজারেও। অনেকে সরাসরি জমি থেকে লটকন কিনে সরবরাহ করছে দেশ-বিদেশের বাজারে।

বেলাবো উপজেলার লাখপুর গ্রামের নাজমুল হক বলেন, কম খরচে লাভজনক ফসলের মধ্যে একমাত্র হল লটকন। লটকন বাগান শুরু করতে প্রথমে খরচ বেশি পড়লেও পরবর্তীতে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয় না, সে তুলনায় লাভ বেশি হয়।

একই গ্রামের লটকন চাষী রাসেল মিয়া বলেন, স্থানীয় বাজার ছাড়াও লটকনের ফলন ধরার পর জমিতেই পাইকারী বিক্রি করে দেয়া যায়। পাইকাররা বাগান কিনে দেশে-বিদেশের বাজারে লটকন পাঠিয়ে থাকেন।
নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের উপ-পরিচালক শোভন কুমার ধর জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ২৩ হাজার ৭শ মেট্রিকটন লটকনের ফলন পাওয়া যাবে। উৎপাদিত এ লটকনের বিক্রির লক্ষ্যমাএা ধরা হয়েছে ১শ ৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, লটকন চাষ বৃদ্ধিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চারা উৎপাদন করাসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের বাজারে রপ্তানি হওয়ায় লটকনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন কৃষকরা। প্রতি হেক্টরে ১৫ মেট্রিকটন ফসল হিসাবে লটকনের মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাএা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৭০০ মেট্রিকটন। পাইকারী ৭০ টাকা কেজি দরে যার বিক্রয় মূল্য দাড়াবে ১৬৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।-সম্পাদনা: সাইদ রিপন

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধবালিশ মাসুদুলসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ
পরবর্তী নিবন্ধফতুল্লায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ী নিহত