নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে খেলাপিঋণ মহামারি আকার ধারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ
সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা মন্দ ঋণ।
অবলোকন ধরলে এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা বলছে, নানা রকম
লুকিয়ে রাখা ঋণ যদি এর সঙ্গে যুক্তি করি, তাহলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায়
৩ লাখ কোটি টাকার উপরে। যা বিপজ্জনক, কোনো সন্দেহ নেই।’
রবিবার (২৩ জুন) রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি আয়োজিত
‘সিপিডি বাজেট ডায়লগ ২০১৯’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই মন্তব্য করেন
বিএনপির এ নেত্রী।
প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের নানা দিকের তীব্র সমালোচনা করেন
সাংসদ রুমিন ফারহানা।
বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এ সাংসদ বলেন, ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে
একটা বাজেট সরকারের চরিত্রকে খুব স্পষ্ট করে দেয়। বাংলাদেশ এমন একটা দেশ,
অতি ধনি বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ। অতি ধনি মানে ২৫০ কোটি টাকার
উপরে যাদের সম্পদ। গরিব বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয় সর্বোচ্চ।’
বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র কমার হার কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন,
‘দরিদ্র ও ধনীদের মধ্যে এই যে বৈষম্য বাড়ছে, এটা কমানোর ব্যাপারে এই
বাজেটে কিছুই বলা নেই।’
২০৩০ সালের মধ্যে ৩ কোটি কর্মসংস্থান করা হলেও বেকার সমস্যা কমার
সম্ভাবনা নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বাজেটে ঘাটতি ১ কোটি ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এই
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ও আভ্যন্তরীণ ঋণের কথা বলা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নেয়া
হবে ৬৪ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হবে ৪৭ হাজার
কোটি টাকা। এই ঋণ ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হবে, ব্যাংকগুলোর অবস্থা কী?’
দেশে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই পরিমাণ ঋণ যদি
ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হয়, তাহলে দেশের বিনিয়োগের অবস্থা কী দাঁড়াবে?
আপনারা জানেন, গত এক দশক ধরে দেশে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। বিনিয়োগ না
হলে কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেয়া হয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও
সামাজিক সুরক্ষা খাতে উল্লেখ করে এ সাংসদ বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা
সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে, যে প্রত্যাশা ছিল এসব
খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হবে, সেটার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না।’
চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর ৬৬ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে
চলে যায়। এ বিষয়গুলো বাজেটে আসেনি বলেও জানিয়েছেন রুমিন ফারহানা।
সিডিপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতে ২ থেকে আড়াই শতাংশ জিডিপি
বাড়িয়ে দেখানো হয়। একই কথা কিন্তু সেন্টার ফর পলিসি ডায়গলও (সিপিডি)
বলেছে বাংলাদেশের ব্যাপারে। বাংলাদেশের জিডিপির আসল কী অবস্থা, সেটি যেন
তারা তুলে ধরে।’
এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান,
সিপিডির বিশেষ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানসহ দেশে-বিদেশি অনেকে
সিপিডির এ বাজেট সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
