পপুলার২৪নিউজ ডেস্ক:
প্রাণে বাঁচার কথা ছিল না সরলা দেবির। কিন্তু তিনি বাঁচলেন। সেই সঙ্গে ফিরে পেলেন বিচ্ছিন্ন অঙ্গও। বাম হাতের কব্জি থেকে বিচ্ছিন্ন অঙ্গ ফ্রিজে রাখার পর সাত ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে ফিরে পেলেন স্বাভাবিক হাত।
দুর্বৃত্তদের চাপাতির এলোপাথাড়ি কোপে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ছিন্নভিন্ন হয়েছিলো জৈন দম্পতির।
কলকাতার কালী টেম্পল রোডের ওই ঘটনায় শহরবাসীর সঙ্গে শিউরে উঠেছিলেন চিকিৎসকরাও।
বিশেষ করে বীভৎস অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল সরলা দেবীকে। ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছিল মুখের প্রতিটি হাড়। মাথার খুলি রক্তাক্ত। ডান হাত চাপাতির কোপে ক্ষতবিক্ষত। আর বাঁ হাত কব্জির নীচ থেকে নেই!
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ সরলা দেবীকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্লাস্টিক সার্জন অনুপমবাবু হাতের অবস্থা দেখে জানান, তখনই অস্ত্রোপচার করলে হয়তো জোড়া লাগানো সম্ভব হবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে রক্তচাপ ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নীচে। আশংকাজনক রকম কম ছিল হিমোগ্লোবিন। ওই অবস্থায় অস্ত্রোপচারের ধকল নিতে পারবে না রোগি। ফলে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না। তখন সিদ্ধান্ত হয়, বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতটি ঠিক উপায়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। এবং তা-ই হয়।
প্লাস্টিক সার্জন অনুপম জানান, ঘটনার পরদিন সকাল এগারোটা নাগাদ যখন একটু স্থিতিশীল হয় সরলা দেবীর অবস্থা, তখনই ফ্রিজ থেকে কাটা হাতটিকে বের করে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যেহেতু বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে কেটে গেছে ১৬ ঘণ্টা, তাই সাফল্যের সম্ভাবনা ৫০-৫০ ধরে নিয়েই অস্ত্রোপচার শুরু হয়। সাত ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার।
প্লাস্টিক সার্জন কৌশিক নন্দী বলেন, ওই পরিস্থিতিতেও যে চিকিৎসকেরা রোগির প্রাণ বাঁচানোর পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন হাতটির কথা মাথায় রেখেছেন, তা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে।
তিনি জানান, এই অবস্থায় অঙ্গকে এমন ভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, যাতে যথেষ্ট ঠান্ডা থাকে অঙ্গটি, কিন্তু জমে না-যায়। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা নেমে গেলেই কিন্তু ওই অঙ্গটি আর জোড়া লাগানো সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে সব দিক মাথায় রেখে যে এমন একটা সফল অস্ত্রোপচার হল। তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
চিকিৎসক মহলের মতে, বিচ্ছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফের জুড়ে দেয়ার অস্ত্রোপচার এ শহরে আগেও হয়েছে একাধিক বার। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অঙ্গকে এতটা সময় ধরে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রেখে, সেটিকেই বিনা জটিলতায় ফের জুড়ে দেয়ার নজির কম।
