পপুলার২৪নিউজ,জেলা প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার পিঞ্জুরী গ্রামে এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) বিবস্ত্র করে ভিডিওচিত্র ধারণের দৃশ্য সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার হুমকি এবং এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টায় পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের আটক করতে অভিযান পরিচালনা করেছেন।
নির্যাতিতা ওই ছাত্রী এ বছর পিঞ্জুরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী দিচ্ছিলেন। এ ঘটনার পর ওই ছাত্রী পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারছে না।
পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্ত সম্রাট মন্ডলের মা আশা মন্ডল এবং সজল বিশ্বাসের মা রেখা বিশ্বাস ও বোন রমা বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে অভিযুক্ত ৩ জনের নামে নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন আইনে কোটালীপাড়া থানায় মামলা করেন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলো- একই গ্রামের শ্রীদাম মন্ডলের ছেলে সম্রাট মন্ডল (২৩), বঙ্কিম বিশ্বাসের ছেলে সজল বিশ্বাস (২২) ও নির্মল বসুর ছেলে মিঠু বসু (২০)। এ ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে। আসামিদের আটক করতে কৌশল হিসেবে তাদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জিম্মায় নিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, সম্রাট, মিঠু ও সজল এরা সমবয়সী। তারা মাদক সেবন করে। এলাকায় ভবঘুরে বখাটে হিসেবে পরিচিত। সম্রাট ওই স্কুলছাত্রীকে প্রেম নিবেদন করে ব্যর্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার শোনামেলা হয়েছে। সে আর উত্ত্যক্ত করবে না বলে এলাকার মুরব্বিদের মুচলেকাও দিয়েছিল। তারপরও এই ঘটনা ঘটালো। তাই এলাকাবাসী এই ঘটনার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, বাড়ির পাশের বখাটে সম্রাট মন্ডল স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে আমাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো এবং প্রেম করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতো। তার ভয়ে আমি বাড়ি থেকে বের হতে পারতাম না। আমি প্রেমের সম্পর্ক করতে রাজি না হওয়ায় সে আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ওই দিন রাতে বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর সম্রাটসহ ৩ বখাটে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ওই ছাত্রীর বাবা স্কুল শিক্ষক সুবীর চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, এ ঘটনা ফাঁস করলে বখাটেরা আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এ ঘটনার পর আমার মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারছে না। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার প্রেমানন্দ মন্ডল জানান, কীটনাশক পান করে ওই স্কুলছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার অবস্থা খারাপ থাকায় গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিলো। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে আবার কোটালীপাড়া হাসপাতালে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২-১ দিনের মধ্যে আমরা তাকে ছেড়ে দিতে পারবো।
কোটালীপাড়া থানার পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে শুক্রবার বিকেলে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। তাদেরকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দোষী ওই বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গোপালগঞ্জের সহকারি পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনাটি জানার পর আমরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছি। আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করতে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওই ছাত্রী বাইরের বাথরুম থেকে বের হওয়ার পর পিঞ্জুরী গ্রামের শ্রীধাম মন্ডলের ছেলে সম্রাট মন্ডল, তার সহযোগি বঙ্কিম বিশ্বাসের ছেলে সজল বিশ্বাস ও নির্মল বসুর ছেলে মিঠু বসু এসে হাজির হয়। সেখানে তাকে জোর করে বিবস্ত্র করে বাথরুমের বৈদ্যুতিক আলোতে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরে তার মুখ চেপে ধরে বাথরুম থেকে বাড়ির পাশের খোলা মাঠে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা ওই ভিডিওচিত্র সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। নিজের ও পরিবারের সম্মান নষ্টের ভয়ে সে পরের দিন ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।
