রাজু আনোয়ার: ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের অংশ গ্রহণে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আগামী ২০ থেকে ২৬ জুন পযর্ন্ত সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯’ । সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্রের বাস্তবায়নে আসরে সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান।
উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরতে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল, এনডিসি।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী। সংসাদ সম্মেলনে আয়োজনের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, এমপি।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ মঞ্চনাটককে দেশে-বিদেশে আরো প্রচার ও প্রসার এবং একইসঙ্গে বিদেশের মানসম্পন্ন নাটকের সঙ্গে এদেশের নাট্যপ্রেমী, মঞ্চপ্রেমী দর্শক ও থিয়েটারকর্মীদের সুপরিচিতকরণ এবং গুণগত নাটকের রস আস্বাদনের মাধ্যমে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চাকে আরো গতিশীল ও বেগবান করার লক্ষ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে এ অল্প সময়ের মধ্যে রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, ভারত, ভিয়েতনাম ও নেপাল থেকে ৬টি নাট্যদল আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উৎসবে অংশগ্রহণে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের ২টি নাট্যদল মিলে সর্বমোট ৮টি দল এ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আইটিআই-ও যাতে এক বছর পর পর তাদের ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব করতে পারে, সেজন্যে আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব। একই সাথে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন যাতে প্রতিবছর জাতীয় নাট্যোৎসব এবং বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ পথনাট্যোৎসব করতে পারে তার জন্যে সহায়তা দেয়া হবে। নাটকের মত সংস্কৃতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমরা প্রণোদনা দেব।’
উৎসব পরিচালক দেবপ্রসাদ দেবনাথ উৎসবরে সময়সূচী এবং বিশেষ আয়োজন কর্মশালা, সেমিনার, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নাট্য নির্দেশক রতন থিয়াম’ এর মাস্টার লেকচার এবং প্রদর্শনী শেষে সরাসরি ‘মিট দ্য ডিরেক্টার’ এর কথা উল্লেখ করেন।
আইটিআই-এর সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ, ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯’ আয়োজনের জন্য। আমরা চাইবো এই উৎসব যাতে নিয়মিত আয়োজন করা হয়।’
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আইটিআই-এর সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ।
উল্লেখ্য, আগামী ২০ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজন। অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশের ধৃতি নর্তনালয়ের পরিবেশনা ও ওয়ার্দা রিহাব-এর নির্দেশনায় অনুষ্ঠিত হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘মায়ার খেলা’।
উৎসবের ২য় দিনে ২১ জুন বিকাল ৫টায় জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে ফ্রান্সের থিয়েটার দ্য ভিদে লুসান এবং ইয়ং ভিক লন্ডন এর নাটক ‘ও মাই সুইট ল্যান্ড’ এবং সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে ভারতের কোরাস রেপার্টরী থিয়েটার এর পরিবেশনায় নাটক ‘ম্যাকবেথ’।
৩য় দিনে ২২ জুন সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে বাংলাদেশের অন্বেষা থিয়েটারের নাটক ‘জয়তুন বিবির পালা’। নাট্যোৎবের ৪র্থ দিনে ২৩ জুন একই সময় ও স্থানে চীনের জোহো থিয়েটারের পরিবেশনায় নাটক ‘এফ সিকে’ মঞ্চস্থ হবে। উৎসবের ৫ম দিন ২৪ জুন একই সময় ও স্থানে মঞ্চস্থ হবে নেপালের মান্ডালা থিয়েটারের নাটক ‘ঝিয়ালিঞ্চা (ড্রাগনফ্লাই)’।
ফেস্টিভ্যালের ৬ষ্ঠ দিনে ২৫ জুন একই সময় ও স্থানে মঞ্চায়ন হবে ভিয়েতনামের লে নক থিয়েটারের পরিবেশনায় ‘দ্য ওয়াইল্ডার্নেস’ অবলম্বনে নাটক ‘কিম তু’। আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের শেষ দিনে আগামী ২৬ জুন সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হবে রাশিয়ার নিকোলাই জাইকভ থিয়েটার এর পরিবেশনায় ‘লাইট পাপেট শো’।
সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি থিয়েটার সংক্রান্ত একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২২ জুন শনিবার বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে (৭ম তলা) অনুষ্ঠিতব্য সেমিনারের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও ব্রাত্যজনীন থিয়েটারের পারস্পরিক বিনিময়’। এছাড়াও প্রতিদিন নাটকের মঞ্চায়ন শেষে অনুষ্ঠিত হবে মুক্ত আলোচনা ‘মিট দ্যা ডিরেকটর’।
