রাজধানীর শপিংমল ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে মধ্যরাত অবধি বিক্রি চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাত বারোটা। অনেকটা দিনের মতোই সরগরম ঈদ বাজার। কোন কোন শপিংমলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। গতকাল রাতের এমন চিত্র বলে দিচ্ছে অনেক ক্রেতাই এই যানজট ও ভিড় এড়াতে ঈদ কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছেন মধ্যরাত। আর ক্রেতা সমাগম হচ্ছে বলে মধ্যরাত অবধি রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোও খোলা রাখছেন দোকানিরা। শুধু পোশাকই নয়, এখন জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর। বেচাকেনায়ও দম ফেলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দিনের বেলা নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলেও রাতে তরুণ-তরুণী ও পুরুষ ক্রেতারা মার্কেটে বেশি ভিড় করছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন বিপণিবিতানে এবার আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কেউ কেউ সাদা-কালো, হলুদ, নীল কাপড়ের ওপর কৃত্রিম ফুল দিয়ে তাদের বিপণিবিতান, শপিংমল এবং প্রবেশদ্বার দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে রেখেছেন। কিছু কিছু মার্কেটে গ্রামীণ আবহ তুলে ধরা হয়েছে প্রবেশদ্বারের সাজসজ্জায়।
রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, শুধু পোশাক নয়, এখন জুতা, গহনা, প্রসাধনসামগ্রীরও বেচাকেনা বেড়েছে। এখন দম ফেলার যেন সময় নেই দোকানিদের। সাধারণত দিনের বেলায় নারী ক্রেতারা রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ভিড় জমাচ্ছেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বদলে যাচ্ছে ক্রেতার ধরন। এ সময় নারী ক্রেতাদের চেয়ে ঈদ বাজারগুলোয় বেশি দেখা যায় তরুণ-তরুণী ও পুরুষদের।
গতকাল মধ্যরাতে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজন জানান, অসহনীয় যানজট এড়াতেই এ সময় মার্কেটে এসেছেন। আর দোকানিরা জানান, এবার রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। ক্রেতাও আসছেন প্রচুর।
ধানমন্ডি থেকে কেনাকাটা করতে আসা কাজল রহমান জানান, রাত হলেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকতে খারাপ লাগে না। পাশাপাশি রাতের ঢাকার সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়।
বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা যায়, মধ্যরাতেও ক্রেতাদের পদভারে মুখরিত শপিংমলটি। অনেক ক্রেতাকে মার্কেটটির সামনে বসে সপরিবারে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এখানে মাঝরাতে কেনাকাটা করতে আসার কারণ জানতে চাইলে একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা বাবর আলী বলেন, দিনে অনেক যানজট থাকে। তাই রাতে এসেছি। এখন যানজট নেই। আজিমপুর থেকে মাত্র ১০ মিনিটে এসেছি বসুন্ধরা সিটিতে। দিনে হলে ১ ঘণ্টায়ও পৌঁছানো যেত না।
রাতে যমুনা ফিউচার পার্কে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন একটি বেসরকারী কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রহমান আজিজ ও তার স্ত্রী আখি। তারা জানান, দিনে ব্যস্ততা ও তীব্র যানজটের কারণে রাতে এসেছেন ঈদ কেনাকাটায়। তিনি বলেন, দিনে খুব ভিড় থাকে, সঙ্গে যানজট তো আছেই। আর ঈদ উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তাই রাতে কেনাকাটা করতে এসেছি।
যমুনা ফিউচার পার্কের ইয়োলো ফ্যাশনের বিক্রেতা মইনুল ইসলাম জানান, দিনে যারা ব্যস্ত থাকেন, তারাই আসেন ইফতারের পর। এর মধ্যে অনেকেই আসছেন মধ্যরাতে। এসব ক্রেতা এসে ঘুরে যান না। পছন্দের জিনিসটি কিনেই তারপর বাড়ি ফেরেন।
চাঁদনী চক মার্কেটে শপিং করতে এসেছিলেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম। তিনি জানান, দিনে সময়ই কই শপিং করার। এরমধ্যে দিনের বেলায় গরম ও তীব্র যানজট তো আছেই। তাই শপিং করতে রাতে আসা। খুব ভাল লাগছে নিরিবিলি শপিং করতে পেরে। সন্তানরাও অনেক খুশি।
এদিকে রাত ১২টার দিকে ‘দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন এক দাম দেড় শ’ এমন স্লোগানে মুখরিত ছিল ফার্মগেট এলাকার ফুটপাথ। শুধু ফার্মগেট নয়, রাজধানীর গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম উত্তর ও দক্ষিণ গেট, মতিঝিলের শাপলা চত্বর, সেগুনবাগিচা, মৌচাক ও মিরপুরে ১০ গোলচত্বর ও ১ নম্বর ফুটপাথ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাতেও দিনের মতো ভিড়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগামী অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আয় করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধসার্বিক রপ্তানির পাশাপাশি সেবা খাতেও চমক লাগানো রপ্তানি আয় করেছে