পপুলার২৪নিউজ ডেস্ক:
দেশের মাটিতে টানা দ্বিতীয়বারের মত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। নিজের দেশে অনুষ্ঠিতব্য এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের জন্য মুখিয়ে আছে মরগ্যান বাহিনী। শিরোপা জিততে না পারাটা অনেক বড় হতাশার বিষয় হবে বলে মনে করেন স্বাগতিক অধিনায়ক। এছাড়া গতবছর বাংলাদেশ সফরে না আসা নিয়েও কথা উঠেছে সাক্ষাতকারে। স্কাই স্পোর্টসে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকার পর্বে ছিলেন টেস্ট ফরম্যাটের নতুন দলপতি জো রুটও। মরগ্যান ও রুটের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক দুই কিংবদন্তি অধিনায়ক মাইকেল আথারটন ও নাসের হুসেইন।
মাইকেল আথারটন: ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডে দল বেশ পরিবর্তন হয়েছে। মরগ্যানের অধীনে কেমন লাগছে?
জো রুট: অনেক কিছুতে সম্পূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু গেল কয়েক বছর আমাদের সাফল্যের পেছনে তার (মরগ্যান) প্রধান ভূমিকা ছিলো। তিনি দলের মধ্যে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছেন যেখানে আমরা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির উপর বেশি নির্ভরশীল নই। চাপের মধ্যে কিভাবে নিজেকে ঠিক রাখতে হবে তা অনেককেই তিনি শিখিয়েছেন। সাথে গেল বিশ্বকাপের পর দলে বেশ কিছু নতুন মুখ এবং অভিজ্ঞদের একসাথে রেখেছেন। যখন সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছ সেরাটা প্রয়োজন হবে এবং সামনে থেকে তারা নেতৃত্ব দিবে। মরগ্যান হলো একটি যোগ্য উদাহরন, তিনি শুধুমাত্র মাঠের ভেতরেই নয় সবক্ষেত্রেই নিজেকে তৈরি রাখেন।
নাসের হুসেইন: এটা কি দলের মধ্যে একটা পরিবর্তন আনতে অনুপ্রানীত করেছে? তোমাকে কখনোই ক্লান্ত মনে হয়নি, তবে তুমি আন্তরিক ছিলে?
মরগ্যান: ক্যারিয়ারের শুরুতে আমার মাথা কিছুটা গরম ছিল এবং সত্যিই আমি কিছু খারাপ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন সেটা অনেকটাই কেটে গেছে। যেটা কখনোই আমার পক্ষে কাজ করেনি। কিন্তু সব সময় সব কিছু সঠিকভাবে কাজে আসেনি। শারিরীক ভাষা দ্বারা অনেক কিছু বুঝা যায়। সুতরাং তুমি কি করতে চাও তা বুঝানোর জন্য ধীরস্থির থাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ন।
মাইকেল আথারটন: যখন এউইন ওয়ানডে দলের দায়িত্ব পেল, তখন এটি স্পষ্ট যে কঠোর পরিবর্তন প্রয়োজন ছিলো। তুমিও (রুট) কি নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কঠোর বা সামান্য পরিবর্তন ঘটাবে?
জো রুট: যদি তুমি দেখ, আমাদের দলটি ভারসাম্যপূর্ণ এবং এটি সম্পূর্ণভাবেই তৈরি একটি দল। অবশ্যই, আমরা সামনের কয়েক মাস একটি বা দুটি জায়গাতে বেশি করে পর্যবেক্ষণ করবো। কিন্তু সবদিক থেকে পরিপুর্ন থাকা স্কোয়াডটি আমরা বজায় রাখবো। আমাদের এখন এমন একটি মূল দল রয়েছে যারা ৩০টি টেস্ট খেলে ফেলেছে এবং পরবর্তী পর্যায়ের জন্য তারা সেরা অবস্থায় রয়েছে।
মাইকেল আথারটন: তুমি (মরগ্যান) রুটের সাথে খেলেছো। তবে তার অধীনে খেলোনি। সে কেমন অধিনায়ক হবে? বলে তুমি মনে করছ?
এউইন মরগ্যান: সে নিখুত সংমিশ্রন। বেশ ঠান্ডা ও শান্ত মেজাজের এবং এখন সে খেলার প্রতি অনেক আগ্রহী। তার মধ্যে অনেক ভারসাম্য রয়েছে কারন যারা আগ্রহী থাকে তারা অনেক কিছু স্পর্শ করতে পারে।
নাসের হুসেইন: তুমি (মরগ্যান) খেলা ও নেতৃত্ব দেয়ার সময় তুমি অনেক বেশি আবেগী-মনোযোগি। কিন্তু আমি রুটকে দেখি,সে অনেক শান্ত এবং অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক।
মাইকেল আথারটন: (মরগ্যান) সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে যখন বলছি, আমি বাংলাদেশ সফরের দিকেই ফিরে যেতে চাই। তোমর সিদ্বান্তের সমালোচনা আমরা করেছি। কিন্তু যাওনি?
এউইন মরগ্যান: এটি খুবই সহজ ব্যাপার। বাংলাদেশ সফর নিয়ে আমি অনুভব করেছি, সেখানে নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিলো এবং আমাদের একটা পর্যায়ের সুরক্ষা প্রয়োজন ছিলো। আমাকে বাইরে যেতে অনুমতি দেয়া হয়নি এবং একজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে সেরাটাই করতে হতো। আমি অনুভব করি, আমি যেতে পারবো না এবং আমার কাজটি করতে পারবো না। যদি আমি যেতাম তবে আমি ভুল-ভাল কিছু করতে পারতাম না।
মাইকেল আথারটন: কেউ কেউ বলে লন্ডনে বর্তমানে সন্ত্রাসী হুমকি বেশি। পার্থক্যটা কি?
এউইন মরগ্যান: এটি খুবই ভালো প্রশ্ন। যদিও, আমি ১৫টি গাড়ী, ২টি হেলিকপ্টার, ৩টি স্নিপার ও ১টি অ্যাম্বুলেন্স সাথে লন্ডন ভ্রমন করি না।
মাইকেল আথারটন: এই গ্রীষ্মের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যাশা কি?
জো রুট: অবশ্যই। গত কয়েক বছর ধরে ওয়ানডে ক্রিকেটে আমাদের পারফরমেন্সের কারনে এটি নিয়ে অনেক বেশি কথা হচ্ছে। আমরা অনেক উন্নতি করেছি। তাই কাগজে-কলমে আমরা টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা একটি দল। এতে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি হবে কিন্তু এই চাপের মধ্যেই সেরাটা দিতে হবে। তাই আমাদের অনুশীলনে আসল ফোকাস হলো, চাপের মধ্য থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
নাসের হুসেইন: জো রুট ভালো একটি পয়েন্ট বের করেছে, কিভাবে চাপের মধ্যে পারফরমেন্স করা যায়। টুর্নামেন্টে এটি কি একটি ভিন্ন ধরনের এক চাপ? একটি খারাপ ম্যাচ এবং বাদ পড়ে যেতে পারেন। এজন্য কি তোমার ভিন্ন মানসিকতার প্রয়োজন রয়েছে?
এউইন মরগ্যান: আমার কাছে, ভিন্ন ধরনের মানসিকতার প্রয়োজন নেই। একই মানসিকতায় পরিকল্পনা করা যেতে পারে। প্রথম বছর আমরা দল হিসেবে উন্নতি করেছি। আমরা ভালো খেলার দিকে বেশি ফোকাস করছি এবং আগের চেয়ে আরও ভালো ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করছি। আমাদের খেলাটি প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছি এবং একটি বড় টুর্নামেন্ট জয় করার জন্য যথেষ্ট ভালো। আমি এখন তিন বা চারের মধ্যে খেলছি, যখন প্রতিপক্ষ ৩৫০-৩৬০ করে ফেলছে তারপরও আমরা ম্যাচের মধ্যে ছিলাম। এটি আমাদের বিশ্বাসের বাইরে ছিলো। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে আমরা বিশ্বাস নিয়েই যাচ্ছি এবং গত ১৮ মাস ধরে এই বিশ্বাসটিই বহাল রেখেছি।
নাসের হুসেইন: ইতোমধ্যেই আপনি (মরগ্যান) ইংল্যান্ড অধিনায়ক হিসেবে অনেক সাফল্য অর্জন করেছেন, দলের সংস্কৃতি পরিবর্তন করে দিয়েছেন। কিন্তু আইসিসি’র কোন ইভেন্টে জিততে না পারলেও কি সফল?
এউইন মরগ্যান: না, পরে কি ঘটে সেটিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি, তাই আমরা উচ্চতায় যেতে পারি। আমরা দেখেছি, এই স্কোয়াডটি উচ্চতায় যেতে পারে। তাই তাদের এখন সেটিই করে দেখাতে হবে। যদি আমরা আইসিসির এ টুর্নামেন্টটি জিততে না পারি, তবে তা হবে বিশাল হতাশার। ‘
