নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবারও সূচকের চাঙ্গাভাবের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। আর টাকার পরিমাণে ডিএসইর লেনদেন প্রায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হয়েছে। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, টানা দরপতনের প্রেক্ষিতে প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস (দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা) বেঁধে দেওয়ার পর শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। এর আগে ঈদের পর শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই বৈঠকে বড় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।
কিন্তু তাতেও দরপতন বন্ধ না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ফ্লোর প্রাইস চালুর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। শেষ পাঁচ কার্যদিবসের ক্লোজিং প্রাইসের গড় দাম প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস হিসেবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই ফ্লোর প্রাইস কার্যকর হয়েছে গত রোববার থেকে।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রতিটি সিকিউরিটিজের দাম সমন্বয় করায় রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়ে যায়। আর লেনদেন শুরু হওয়ার পর ধারাবাহিকবাবে বাড়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। এতে একদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৫৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের প্রথম ঘণ্টাজুড়েই ধারাবাহিকভাবে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। এতে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষদিকে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে কিছু প্রতিষ্ঠানের দাম কমে যায়। অবশ্য এরপরও যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে, তার দ্বিগুণ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার মাধ্যমে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০২টির এবং ৭৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ১৬৩ পয়েন্টে উঠে এসেছে। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি উত্থান হয়েছে অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২০৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৯২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৫৬৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৩৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের ৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৩৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সোনালী পেপার।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, স্কয়ার টেক্সটাইল, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, কেডিএস এক্সসরিজ, শাহিনপুকুর সিরামিকস, স্কয়ার নিট কম্পোজিট এবং মতিন স্পিনিং।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৩৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৯টির এবং ৭২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
