ফুটবল মাঠে এমন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটনা ঘটেছে, শুনলে চমকে যেতে হয়। এমন কিছু ঘটনা নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন—
ম্যাচের আগে মৃত্যুদণ্ড!
আফগানিস্তানে নব্বইয়ের দশকে তালেবান শাসন চলাকালীন এটা ছিল একেবারেই প্রাত্যহিক ঘটনা। কাবুলের গাজি স্টেডিয়ামকে ব্যবহার করা হয়েছে জল্লাদখানা হিসেবে। ম্যাচের আগে কার্যকর করা হতো মৃত্যুদণ্ড। কিংবা গ্যালারির দর্শকদের সামনেই অত্যাচার করা হতো ধৃত মানুষকে। পাথর ছুড়ে মারা, শিরশ্ছেদ কিংবা হাত-পা কেটে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো ঘটনাও তখন একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। আফগানদের মতে, গাজি স্টেডিয়ামের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তখন ঘাস বেড়ে উঠতে পারেনি, কারণ প্রায় সব সময়ই ঘাস ছিল রক্তে-রঞ্জিত!
দর্শক যখন গোলরক্ষক
১৯৪৫ সালে হোয়াইট হার্ট লেনে প্রীতি ম্যাচে ডায়নামো মস্কোর মুখোমুখি হয়েছিল আর্সেনাল। ম্যাচ শুরুর পর গাঢ় ঘন কুয়াশার কারণে খেলা বন্ধের পক্ষে ছিল দুই দলই। কিন্তু রেফারি রাজি হননি। অগত্যা নিজেদের মতো করে খেলতে শুরু করে আর্সেনাল ও মস্কো। ম্যাচের একপর্যায়ে ডায়নামো মস্কো বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামালেও যাঁর বদলি হিসেবে নামাচ্ছে তাঁকে তুলছে না! এভাবে রাশিয়ান ক্লাবটির দলে একসঙ্গে খেলেছে ১৫ জন! আর্সেনালও কম যায়নি। ইংলিশ ক্লাবটি মাঠে ফেরত পাঠায় লাল কার্ড দেখা খেলোয়াড়কে! ঘন কুয়াশার কারণে রেফারি এসবের কিছুই দেখতে পাননি।
কিন্তু দর্শকদের চোখ এড়ায়নি। আর্সেনালের গোলরক্ষক দিগ্ভ্রান্ত হয়ে নিজ গোলপোস্টের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হলে তাঁর বদলে গোলপোস্ট সামলেছিলেন এক গানার সমর্থক!
মাঠে শাকসবজি নিষিদ্ধ
চেলসির একনিষ্ঠ ভক্তরা একসময় ‘সেলেরি’ নামে এক ধরনের শাক নিয়ে মাঠে ঢুকতেন খেলা দেখতে। প্রিয় দলটির জন্য ‘সেলেরি’ নামের একটি গান গাওয়ার সময় তাঁরা উঁচিয়ে ধরতেন এসব শাকসবজি, এমনকি অনেকে মাঠেও ছুড়ে মারতেন! ২০০৭ সালে এক বিবৃতির মাধ্যমে চেলসি জানিয়ে দেয়, মাঠে শাকসবজি নিয়ে আর কোনো দর্শক ঢুকতে পারবে না। আইন অমান্য করলে চেলসির খেলা দেখা থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হতে হবে এবং সেটা হবে অপরাধের সমতুল্য, যা পুলিশের খাতায়ও নথিবদ্ধ থাকবে।
একবার না পারিলে দেখো ষোলোবার!
শীতকালে খারাপ আবহাওয়ার জন্য ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কিংবা এফএ কাপের ম্যাচ মুলতবি রাখা নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, একটা ম্যাচ যদি একই কারণে বারবার মুলতবি ঘোষিত হয়! ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে লিংকন সিটি-কভেন্ট্রি সিটি ম্যাচে ঠিক এটাই ঘটেছিল। ম্যাচের দিনক্ষণ ছিল ৫ জানুয়ারি ১৯৬৩। কিন্তু বাজে আবহাওয়ার জন্য ম্যাচটি সেদিন মুলতবি ঘোষিত হয়। পরে নির্ধারিত দিনক্ষণেও ম্যাচটি মাঠে গড়ায়নি ঠিক একই কারণে এবং এভাবে মোট ১৫ বার! সব মিলিয়ে ৬৬ দিন পর ষোলোতম বারের চেষ্টায় মাঠে নেমে কভেন্ট্রি সেই ম্যাচটা জিতেছিল ৫-১ গোলে।
কেউ না কেউ মিস তো করবেই
আর্জেন্টিনার চতুর্থ বিভাগীয় লিগ হয়তো গুণে-মানে তেমন ডাকসাইটে নয়। কিন্তু ২০০৯-১০ মৌসুমে অবিশ্বাস্য এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয় জুভেন্টাস আলিয়াঞ্জা-জেনারেল পাজ জুনিয়র ম্যাচ। বাছাইপর্বের এ ম্যাচটি দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। স্নায়ু ক্ষয়ের এ লড়াই শেষ পর্যন্ত জিতেছিল পাজ জুনিয়র। জয়ের ব্যবধান ২১-২০! হ্যাঁ, দুই দলের প্রথম ৪০টি শট কোনো গোলরক্ষকই ঠেকাতে পারেনি। শুধু আলিয়াঞ্জার হয়ে রুইজ গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং সেটা হয়ে থাকে টাইব্রেকারের শেষ শট।
১৪৯-০!
মাদাগাস্কারের নাম শুনলেও সেখানে যে ফুটবল লিগ চালু আছে তা জানেন কজন? অদ্ভুতুড়ে, অবিশ্বাস্য সব গল্পের শেষ পাতে শুনুন সে দেশের লিগের একটা ম্যাচের ঘটনা—মাদাগাস্কান লিগের এক ম্যাচে স্তাদে অলিম্পিক ডে লা’এমরেনেকে এএস আদেমা হারিয়েছিল ১৪৯-০ গোল ব্যবধানে! ভুল পড়েননি। স্কোরলাইনটা নির্ভুল এবং আরও অবাক করা কথা হলো সেই ম্যাচে জয়ী দল কোনো গোল করেনি!
আসল ঘটনা হলো, আগের ম্যাচে রেফারির একটি ভুল সিদ্ধান্তে পেনাল্টি হজম করে জন্য ২-২ গোলে ড্র করেছিল স্তাদে অলিম্পিক। ম্যাচটি জিততে পারলে চ্যাম্পিয়নশিপে টিকে থাকত দলটি। কিন্তু রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে সেটা যেহেতু হয়নি, তাই পরের ম্যাচেই নিজেদের জালে নিজেরাই গোল করে প্রতিবাদের অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছিল স্তাদে অলিম্পিক। এ ভাবনা থেকেই আদেমার বিপক্ষে ম্যাচে দলটি হেরেছিল অবিশ্বাস্য গোল ব্যবধানে। ম্যাচটির দর্শকদের মতো, কিক অফের পর স্তাদে অলিম্পিকের খেলোয়াড়রা শুধু নিজেদের জালেই বল মেরেছে আর গোলরক্ষক সরে গিয়ে জায়গা করে দিয়েছেন!
এ ঘটনায় স্তাদে অলিম্পিকের কোচকে তিন বছর নিষিদ্ধ করার সঙ্গে দলটির চার খেলোয়াড়কে মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত মাঠের বাইরে থাকার শাস্তি দিয়েছিল দেশটির ফুটবল কর্তৃপক্ষ। সে যা-ই হোক, পেশাদার ফুটবলে কোনো ম্যাচে এটাই সর্বোচ্চ স্কোরলাইন!
