প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবে বিএনপি

 পপুলার২৪নিউজ ডেস্ক:

সাম্প্রতিক ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে করা চুক্তিগুলো সম্পর্কে জানতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেবে বিএনপি। একই সঙ্গে চুক্তিগুলো সম্পর্কে জানতে তথ্য অধিকার আইন সামনে রেখে তথ্য কমিশনেও চিঠি দেবে দলটি।

শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া বৈঠকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন।

বিকাল ৫টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ। লন্ডন থেকে বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপে যুক্ত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের দলের স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা একটা চিঠি দেব। ভারতের সঙ্গে কি ধরনের চুক্তি হয়েছে সেইগুলো জানানোর জন্য।

একই সঙ্গে তথ্য অধিকার আইনকে সামনে রেখে তথ্য কমিশনকেও চিঠি দেব ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো জানার জন্য। তবে কবে চিঠি দেয়া হবে সে ব্যাপারে জানাননি তিনি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, তার ভারত সফরের করা চুক্তিগুলো অবিলম্বে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ চুক্তিগুলো নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে অনেক জিজ্ঞাসা আছে। দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন এখানে জড়িত আছে। অবিলম্বে চুক্তিগুলোর বিষয়ে পুরোপুরিভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করা দাবি জানাচ্ছি।

ভারতের সঙ্গে ফেনী নদীর পানি চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতকে পানি দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের তিস্তা নদীর পানির যে দীর্ঘকালের সমস্যা সেটা সমাধান হচ্ছে না। বলা হচ্ছে এখন ভারতের সঙ্গে আমাদের সবচেয়ে বেশি সুসম্পর্ক আছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা কোনো সমাধান হচ্ছে না।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, কয়েকদিন আগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক বলেছেন খালেদা জিয়ার ভালো আছেন। সভায় এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। যা সঠিক নয়, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, প্রায় পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন। অলমোস্ট তিনি ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। এখন তিনি নিজে কিছুই করতে পারেন না। এ বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালক কেন গোপন করেছেন, আমরা জানি না। অবিলম্বে তার স্বাস্থ্যের সঠিক তথ্য জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতীয় দুর্নীতিকে আড়াল করতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ছোটখাটো কিছু বিষয়কে সামনে আনা হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারি লোকেরা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা মনে করি দুদক সব সময় নিরপেক্ষ থাকে না। তাই নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এর তদন্ত করা উচিত।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, গ্রামীণফোন ও রবিতে সরকারি প্রশাসন নিয়োগ দেয়া প্রক্রিয়া চলছে। আমরা মনে করি এই ধরনের প্রক্রিয়া বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। এটাতে সরকার যেভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে, এটা সরকারের আরেকটা ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়াবে। এতে এই দুই প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাম্প্রতিক সময়ে হাইকোর্টে নিয়োগ দেয়া ৯ বিচারককে সরকারদলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দিয়েছে বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল।

একাদশ সংসদ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার দলের শরিকরা বলছে একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোনো ভোট হয়নি। বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচন নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে। কিন্তু সরকার তা নিয়ে কিছু বলছে না। আমরা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করছি। একই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের করা মামলাগুলো এখন পড়ে আছে। এগুলো নিয়ে উচ্চ আদালতকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের ভাসান চরে পুনর্বাসন করা নিয়ে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, এ বিষয়টা পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের নীতির বিরোধী। যেখানে আমরা সব সময় বলছি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ভাসন চরে স্থানান্তরের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করছি যে তারা এখানে থাকবে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিয়ানমার সরকারের লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছে আমাদের সরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন আইনে সাতদিন মামলা হবে না : সেতুমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি থেকে পদত্যাগ করছেন মেয়র আরিফুলসহ ৪ নেতা