সাইদ রিপন: অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বর্তমান সরকার উন্নয়নবান্ধব সরকার। এ সরকার দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ থেকে পিছপা হয়নি।
আস্তে আস্তে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (২৫ মে) মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় গোমতী সেতু খুলে দেওয়া হবে। জনগণের জন্য এ দুটি সেতু উন্মুক্ত হলে দেশের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে।
আজ (২৪ মে) শুক্রবার কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন মন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন কুমিল্লা থেকে ঢাকার যাতায়াত সময় পৌনে দুই ঘণ্টার মতো হলেও কখনো কখনো এ যাত্রায় নয় থেকে দশ ঘণ্টাও লেগে যায়। এর কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত যানবাহন আর চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দুই লেনের মেঘনা ও গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ।
তিনি বলেন, অবশেষে এ ভোগান্তির অবসান করতে আগামীকালই শনিবার মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় গোমতী সেতু খুলে দেওয়া হবে। সেতু দুটি উন্মুক্ত হলে কুমিল্লাবাসী ও বাংলাদেশের ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী সকলের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। আর এই সেতু দুটি খুলে দিলে ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা অনেকটা যানজটমুক্ত এবং স্বস্তিদায়ক হবে আশা করা যায়।
আসন্ন বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেট যে কোন দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি বার্ষিক দলিল যাতে রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা থাকে। এবারের বাজেটটি হবে একটি স্মার্ট বাজেট। বাজেট বক্তব্যের আকার গতানুগতিক বিশাল সাইজের থাকছে না। সংক্ষিপ্ত এবং টু-দ্য পয়েন্টের হবে। তাই বলে বাজেটের আকার ছোট হবেনা বরং যে কোন সময়ের তুলনায় এটি হবে রেকর্ড বাজেট।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে থাকবে নতুন নতুন উদ্যোগ। আগামী বাজেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে। তবে বেশি মনোযোগ থাকবে নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে। ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী, গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে।
ধানের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন সারা বিশ্বে খাদ্যের জন্য হাহাকার ছিল। কিন্তু বর্তমানে সারা বিশ্বেই খাদ্যের উৎপাদন অনেকগুন বেড়ে গিয়েছে। আল্লাহর রহমতে এ বছর আমরা অনেক বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পেরেছি। আমাদের যেমন বেশি উৎপাদন হয়েছে, আশপাশের দেশেও খাদ্যশস্যের উৎপাদন অনেক বেড়েছে।
বাইরে যদি চাহিদা থাকত, তাহলে আমরা রফতানি করতে পারতাম। বাইরেও সেইভাবে চাহিদা নেই। চলতি বছর ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে। কিন্তু এখন চালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারেও কম। যার কারনে ধানের দাম নিয়ে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কৃষককে বাঁচাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে চাল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও, নিরুৎসাহিত করে সীমিতকরণ করতে পারি।
ইতোমধ্যে সে লক্ষ্যে আমরা চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বিদ্যমান শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশে উন্নীত করেছি। এ সিদ্ধান্তে চাল আমদানি নিরুৎসাহিত হওয়ার মাধ্যমে দেশের কৃষকরা আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা রেহাই পাবেন। পাশাপাশি চাল রফাতানির দিকেও আমাদের জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রফতানির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সবজীর উৎপাদনও আমাদের অনেক হচ্ছিল। কৃষকরা দাম পাচ্ছিল না এবং এগুলো পচে যাচ্ছিল। আমরা রফতানির ব্যবস্থা করলাম। রফতানি খরচ দিতে পারে না বলে আমরা সেখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। ভর্তুকি দিয়ে আমরা সেই কাজটি করছি। এর কারণে সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চার নম্বরে। রফতানি করার কারণে এর বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। সবজিতে অন্তত দামটা পাচ্ছে কৃষকরা। একইভাবে চালও ভর্তুকি দিয়ে রফতানি করা যেতে পারে।
