ছাতকে বাণিজ্যিক ভাবেই ক্যাপসিকাম চাষে সফল কৃষক সদরুল

নুর উদ্দিন : সুনামগঞ্জের ছাতকে আধুনিক পদ্ধতিতে বিদেশী সবজি ক্যাপসিকাম গত বছর পরীক্ষা মূলক ভাবে চাষ করা হয়েছিল। এবার বাণিজ্যিক ভাবেই এই সবজির চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক মো. সদরুল হক। তিনি উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নুরুল্লাপুর গ্রামের মো. মাজুল হকের ছেলে। তার বাগানে উৎপাদিত সবজি ক্যাপসিকাম এখন যাচ্ছে রাজধানী ঢাকায়।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ ইতিমধ্যে সদরুলের এই সবজি বাগান পরিদর্শন করেছেন। বিদেশী সবজি ক্যাপসিকামের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও চাষাবাদ বাড়ানো গেলে এটির আমদানি নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসবে, এমনটাই বলছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জানা যায়, বেলে ও দোয়াশ মাটিতে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম ভালো ফলন হয়। ক্যাপসিকাম এখানে মিষ্টি মরিচ হিসেবে পরিচিত। গত বছরের অক্টোবর মাসে বীজ থেকে ক্যাপসিকামের চারা উৎপাদন করেন কৃষক সদরুল। এরপর ৫ বিঘা জমির উপর চারা রোপন করেন তিনি। গত বছর তিনি মাত্র এক বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষাবাদে ভালো ফলন হওয়ায় এবার ক্যাপসিকাম চাষাবাদ করেছেন ৫ বিঘা জমিতে। ফসলের মাঠে গাছে গাছে ঝুলছে ড্রিম, চয়েজ, মেশি ও সুইট বিউটি-৩ জাতের ক্যাপসিকাম। প্রতি বিঘায় এ পর্যন্ত বিদেশী সবজি ক্যাপসিকাম চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এই সবজি চাষে ৫ বিঘা জমিতে মোট খরচ প্রায় সোয়া ৩ লাখ টাকা। চারা রোপনের পর পর্যায় ক্রমে ডিএপি, এমওপি, জিং ও জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে ক্যাপসিকাম বাগানে। গত ১৫ জানুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে ক্যাপসিকাম বিক্রি। এই সবজি বিক্রি চলবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত। মোট খরচ বাদে ক্যাপসিকাম বিক্রিতে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হবে বলে ধারনা স্থানীয় কৃষি বিভাগের।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি ১০ গ্রাম ক্যাপসিকাম সবজিতে রয়েছে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোট্রিন, কার্বোহাইড্রেট ও ভিটামিন সিএর পাশাপাশি এতে ভিটামিন বি, ই, কে থিয়ামিন অ্যাসিড, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদি পাওয়া যায়। এই বিদেশী সবজির ক্যাপসিকামের ক্রেতা মুলত বড় হোটেল রোস্তুরা ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। তারা এটি খাবারের সাথে সালাদ হিসেবে বেশী ব্যবহার করে থাকে। ক্যাপসিকাম সবজি ধান ও রবি শস্যের চাষের চেয়ে বিকল্প চাষ করলে প্রচুর লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক পরিচর্যা ও সময় মত ওষুধ প্রয়োগে এই সবজি থেকে স্বল্প সময়ে ভালো লাভের সুযোগ রয়েছে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদিত ক্যাপসিক্যামের বাজার নিশ্চিত করা গেলে সফলতা পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষক সদরুলের সফলতা দেখে এলাকার অনেক তরুন-যুবক এগিয়ে আসছেন ক্যাপসিকাম চাষের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। যোগাযোগ শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে। বিদেশী সবজি ক্যাপসিকাম উৎপাদন বাড়লে স্থানীয় কৃষকরা অনেকেই স্বাবলম্বি হবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগের। এক সময় শহরের পাকা ভবনের ছাদের টবে মধ্যে শখের বশে বিদেশি সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করতেন অনেকেই। এখন আর ছাদে নয়, ফলন ভালো হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে ক্ষেতের জমিতে এই বিদেশী সবজিটি চাষাবাদ শুরু হয়েছে। মূলত সবজিটির চাষ উপজেলার চারদিকে ছড়িয়ে দিতেই কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
ক্যাপসিকাম চাষি সদরুল ইসলাম বলেন, ক্যাপসিকামের বীজ বপন করার এক মাস পর চারা তৈরি হয়। চারা উপযুক্ত হওয়ার পর জমি তৈরি করতে হয়। চারা রোপণের আগে পলিথিন দিয়ে বেড তৈরি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে গাছের চারা বপন করতে হয়। বীজ বপনের পর গাছ গুলো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে। ফুল আসার ২৫ দিনের মধ্যে ফল বিক্রির উপযুক্ত হয়। কয়েক মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায় এই গাছ থেকে। তিনি বলেন, চলতি বছরে স্বল্প পরিসরে তিনি এই বিদেশী সবজির চাষাবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি ধরে ক্যাপসিকাম বাজারে বিক্রি করেছেন। ডিপাটমেন্টাল ষ্টোর ‘স্বপ্ন’ তে বিক্রি করা হচ্ছে ক্যাপসিকাম।
উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.মশিউর রহমান বলেন, ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় বিদেশী সবজি। এ সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন। বাণিজ্যিক ভাবে ছাতকে এখন ক্যাপসিকাম চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান বলেন, বীজ রোপণের পর থেকেই ক্যাপসিকাম স্থানীয় চাষিকে নানা ভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। এটির চাষাবাদ বাড়াতে ও বাজারজাত করতে কাজ করছে স্থানীয় উপজেলা কৃষি বিভাগ। এছাড়াও উপজেলার অন্যান্য কৃষকদেরও সবজি চাষে আগ্রহী করতে নানামূখী প্রচারনা চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবইমেলায় খাবার খেতে লাগবে ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট
পরবর্তী নিবন্ধজগন্নাথপুরে দৃষ্টিহীন চয়ন তালুকদারের অনার্স পড়াশোনা নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তা