নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ):
ছাতক শহরের প্রানকেন্দ্র বাগবাড়ি এলাকার প্রায় মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত ঐতিহাসিক ইংলিশ টিলার সাহেব মিনার। টিলায় জর্জ ইংলিশ এসকুয়ারের সমাধিস্থল। টিলার নিচে বসবাসকারী ২০-২৫টি পরিবারের লোকজন দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে আতংকের মধ্যে সময় পার করছেন। যেকোন সময় টিলার সু-উচ্চ সাহেবের মিনার ধ্বসে পড়ে হতাহতের মতো ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ঘনঘন ভুমিকম্পেও সাহেব মিনার ধ্বসে পড়ার আতংক, উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে টিলার নিচে বসবাসকারী শতাধিক মানুষের মাঝে। ভয়াবহ অবস্থা থেকে প্রাচীন নিদর্শন সাহেবের মিনার ও টিলার নিচে বসবাসরত পরিবারগুলোকে রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
ইংলিশ টিলার চারপাশে ঘনবসতি আবাসিক এলাকার মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক বছরের পুরনো ইতিহাস সমৃদ্ধ ইংলিশ টিলাটি অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে আছে। ফলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাচীনতম ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটির অস্থিত্ব।
জানা যায়, ১৭৯৪ সালে সুদুর ইংল্যান্ড থেকে জর্জ ইংলিশ এসকুয়ার নামের এক ইংলিশ ব্যবসায়ী স্ব-স্ত্রীক ব্যবসার জন্যে আসেন ছাতকে। তিনি এখানে কোম্পানী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু করেন সর্ব প্রথম চুনাপাথর ব্যবসা। তার প্রচেষ্ঠায় ছাতকে সম্ভাবনাময় চুনাশিল্পের দ্বার উন্মোচিত হয়। জর্জ ইংলিশ ছাতকে থেকে প্রায় ৫০ বছর ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার সুবাধে স্থানীয় বাঙ্গালী ও খাসিয়া ব্যবসায়ীদের সাথে তার গভীর সখ্যতাও গড়ে ওঠে। ১৮৫০ সালে ৭৬ বছর বয়সে জর্জ ইংলিশ ছাতকে মৃত্যু বরণ করলে তার স্ত্রী হেনরী ইংলিশ স্বামীর ব্যবসা-বানিজ্য দেখাশুনা করতেন। ঐ বছরই হেনরী ইংলিশ স্বামীর স্মৃতি রক্ষার্থে টিলার উপর নির্মান করেন একটি দর্শনীয় বিশাল স্মৃতিসৌধ। পরবর্তীতে স্মৃতিসৌধটি সাহেব মিনার নামে পরিচিতি লাভ করে। প্রায় ২৫ ফুট উচু ও বর্গাকারে সাড়ে চার ফুট চওড়া মিনার।
জর্জ ইংলিশ মারা যাবার ক’বছর পর তার স্ত্রী হেনরী ইংলিশ ব্যবসা-বানিজ্য গুটিয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। এ সময় থেকে ইংলিশ টিলা ও সাহেব মিনার সরকারী সম্পত্তিতে পরিণত হয় । পরবর্তীতে এক ভুমিকম্পে সু-উচ্চ মিনারের মাঝের অংশ ভেঙ্গে টিলার উপরে পড়ে গেলে উপরের ক্রমান্বয় সরু অংশ নিচের অংশে এসে আড়াআড়িভাবে বসে যায়। এভাবেই যুগের পর যুগ পড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক এ সাহেবের মিনার। প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সমাধি ও স্মৃতি সৌধটির বাউন্ডারী দেয়াল ভেঙ্গে গেছে। দেশ স্বাধীনের আগে বা পরে কোন সরকারের আমলেই টিলাটি সংরক্ষনের কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
সরকারী তত্ত্বাবধান না থাকায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে একটি মহল অবৈধভাবে টিলার গোড়া থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে। ফলে টিলার ওপর নির্মিত এ স্মৃতি সৌধটি পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে। দেড় শতাধিক বছরের পুরনো সাহেব মিনারটি আজো ‘ইংলিশ দম্পতির’ স্মৃতি মানুষের মনে স্মরণীয় করে রাখছে। এক সময় টিলার মনোরম পরিবেশে সাহেব মিনারে দূর-দূরান্ত থেকে আসা কৌতুহলী দর্শনার্থীদের ভীড় লেগে থাকতো। সে দৃশ্য এখন আর চোঁখে পড়ে না। বিশাল এ মিনারটির গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে মিনারের প্রায় শতকরা ৪০ভাগ ফাউন্ডেশন বেরিয়ে পড়েছে। মিনারের ক’টি অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং কয়েকটি অংশ ভেঙ্গেও পড়েছে ইতিমধ্যে।
ইংলিশ টিলার ভয়াবহতার কথা স্বীকার করে উপজেলা চেয়ারম্যান অলিউর রহামান চৌধুরী বকুল জানান, ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি রক্ষা করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। টিলার নীচে বসবাসরত মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় পৃথক ইঞ্জিনিয়ারিং এজেন্সি রয়েছে। কাজেই পৌর পরিষদের সমন্বয় ও সহযোগিতা পেলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা যাবে।
