রাজু আনোয়ার : নব্বই দশকের পর্দা কাঁপানো দাপটে অভিনেতা মিজু আহমেদ। যার অভিনয়ে ভয় ধরে যেত দর্শকদের মনে। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অবিচ্ছেদ্য অংশ শিল্প সমিতির নেতা বহুল পরিচিত খল অভিনেতা মিজু আহমেদের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী আজ। গুণী এই অভিনেতা না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ২৭ মার্চ। ২০১৭ সালে আজকের এই দিনে শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার পথে ট্রেনের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি ।
ঢাকাই সিনেমায় খল চরিত্রে হাতে গোনা যে কয়জন অভিনয় শিল্পী জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তাদের অন্যতম মিজু আহমেদ। এই অভিনেতার জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৭ নভেম্বর কুষ্টিয়ায়। আসল নাম মিজানুর রহমান। শৈশব থেকেই তিনি থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কুষ্টিয়ার স্থানীয় একটি নাট্যদলে কাজ করেছেন অনেক দিন।
চলচ্চিত্রে মিজু আহমেদ পা রাখেন ১৯৭৮ সালে ‘তৃষ্ণা’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর আশির দশকে তিনি নাট্যধর্মী ‘মহানগর’ (১৯৮১), সঙ্গীত-নাট্যধর্মী ‘নয়নের আলো’ (১৯৮৪), অপরাধ-নাট্যধর্মী ‘সারেন্ডার’ (১৯৮৭), ও নাট্যধর্মী ‘সত্য মিথ্যা’ (১৯৮৯) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
নব্বইয়ের দশকে তুমুল জনপ্রিয়তা পান মিজু আহমেদ। এই সময়ে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহ হলো- অপরাধধর্মী ‘দাঙ্গা’ (১৯৯১), ‘ত্রাস’ (১৯৯২), ‘ত্যাগ’ (১৯৯৩), ‘দেশপ্রেমিক’ (১৯৯৪), ‘খলনায়ক’ (১৯৯৬), মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ (১৯৯৭), অপরাধধর্মী ‘আম্মাজান’ (১৯৯৯) ইত্যাদি।
গুনী এই অভিনেতা তার অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯২ সালে ‘ত্রাস’ সিনেমার জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এছাড়া ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা খল অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেন তিনি ।
মিজু আহমেদের স্ত্রীর নাম পারভীন আহমেদ ।এই দম্পতির তিন সন্তান। দুই মেয়ে কেয়া ও মৌ এবং ছেলে হারসাত।
বহু সিনেমার অভিনেতা মিজু আহমেদের অন্যসব চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে আছে- মাটির ঘর, অশান্তি, বোনের মত বোন, স্ত্রীর পাওনা, পিতা মাতা সন্তান, চাকর, বন্ধু আমার, সোলেমান ডাঙ্গা,বশিরা, আজকের সন্ত্রাসী, অন্ধ ভালোবাসা, কুলি, আম্মাজান, লাঠি, লাল বাদশা, গুন্ডা নাম্বার ওয়ান, ঝড়, কষ্ট,বিদ্রোহ চারিদিকে, যোদ্ধা, ওদের ধর, ইতিহাস, লাল দরিয়া, ভাইয়া, কারাগার, হিংসা প্রতিহিংসা, বিগ বস, চাচ্চু আমার চাচ্চু, মায়ের চোখ, আজকের সমাজ, মহিলা হোস্টেল, হীরা আমার নাম, ভন্ড ওঝা, সিস্টেম, ঝন্টু মন্টু দুই ভাই, মেশিনম্যান, আমি বাঁচতে চাই, বাবার জন্য যুদ্ধ, বাবা আমার বাবা।
এছাড়া মায়ের স্বপ্ন, রাজধানীর রাজা, কোটি টাকার ফকির, বিয়ে বাড়ী, কাজের মানুষ, ঠেকাও আন্দোলন, সবাইতো ভালোবাসা চাও, চিরদিন আমি তোমার, ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না, হায় প্রেম হায় ভালোবাসা, আমার স্বপ্ন আমার সংসার, রিকসাওয়ালার ছেলে, এক জবান, বস্তির ছেলে কোটিপতি, ভালোবাসার রঙ, শিউলীমনী, স্বামী ভাগ্য, বাজারের কুলি, তুমি আসবে বলে, ক্রাইম রোড, মানিক রতেন দুই ভাই, এইতো ভালোবাসা, তবুও ভালোবাসি, ইভটিজিং,কঠিন প্রতিশোধ , আগে যদি জানতাম তুই হবি পর , দুই পৃথিবী , কে আপন কে পর, মানের জ্বালা, দারোয়ানের ছেলে, ভালোবাসা সীমাহীন , অ্যাকশন জেসমিন , বসগিরি , পুড়ে যায় মন,এক জবানের জমিদার হেরে গেলেন এইবার , আড়াল প্রভৃতি।
অভিনয়ের পাশাপাশি মিজু আহমেদ একজন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতাও ছিলেন। শিল্পীদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি। নিজেও একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেছিলেন। প্রয়াত অভিনেতা রাজীবকে নিয়ে তার গড়া প্রযোজনা সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস মুভিজ’ থেকে কয়েকটি ছবি তৈরি হয়। মিজু আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি প্রাপ্ত ছবি হচ্ছে ‘পাষাণ’।অভিনয় করতে করতেই ৪০ বছরের অভিনয় জীবনের ইতি টানলেন শক্তিমান এ অভিনেতা ।
