পপুলার২৪নিউজ প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) অভিযোগ করেছেন, দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণের যে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তার কোনো প্রতিকার নেই। তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের দায়িত্বহীন ও বৈরী আচরণ অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দেশে তাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।
৯ আগস্ট ‘আদিবাসী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রাজধানীর একটি হোটেলে সন্তু লারমা আজ শনিবার এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা বলেন, বর্তমান সরকার বলছে, উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভেসে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণ, গরিব প্রান্তিক কৃষক, দলিত হরিজন, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ, চা-বাগানের শ্রমিকসহ লাখ লাখ মানুষ এই কথিত উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১৩১ জন মানুষ মারা গেল এবং ২০ হাজার পরিবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলো, অথচ সরকারের সেখানে কোনো তৎপরতা নেই। সাজেকে ১৫ হাজার মানুষ খাদ্যাভাবে হাহাকার করছে, সেখানে ১০ হাজার টন খাদ্য দরকার। কিন্তু সরকার নির্বিকার।
সভায় সন্তু লারমা ৬-৯ আগস্ট আদিবাসী দিবসের নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মূল অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বেসামরিক, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিসত্তা জনগণের বসবাস রয়েছে—দেশের এমন সব জেলায় এই দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে।
অনুষ্ঠানে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, এই দেশ থেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণের অস্তিত্ব মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। এ ধরনের তৎপরতাকে তিনি গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধস হিসেবে চিহ্নিত করেন।
গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘দেশে শুধু আদিবাসী নয়, আওয়ামীবাসী ছাড়া আর কেউ ভালো নেই। তবে দেশটা শুধু আওয়ামীবাসীর নয়। সবাই মিলে যুদ্ধ করে দেশটাকে আমরা স্বাধীন করেছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, দেশে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগণ থাকলেও তাদের রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হচ্ছে, কোনো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। কিন্তু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে আঞ্চলিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকার গঠন পর্যন্ত করেছে। এই ধরনের বিধান বাদ দিয়ে জনসংহতি সমিতিসহ সব আঞ্চলিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আদিবাসী ফোরামের সদস্যসচিব সঞ্জীব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী নুমান আহমেদ খান, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা ও রবীন্দ্রনাথ সরেন।
