পপুলার২৪নিউজ,জেলা প্রতিনিধি:
রাজশাহী পুলিশ অফিসার্স মেসে উদ্ধার হওয়া সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সাব্বির আহমেদ সরফরাজের লাশের ময়নাতদন্ত রোববার দুপুরে সম্পন্ন হয়েছে।
ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা জানিয়েছেন, এসি সরফরাজ আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তে হত্যার কোনো আলামত মেলেনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মর্গে এসি সরফরাজের লাশের ময়নাতদন্ত হয় রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর প্রায় ১২টা পর্যন্ত। ময়নাতদন্তে গঠিত তিন সদস্যের ফরেনসিক টিম এ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।
বারিন্দ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক মনসুর রহমান টিমের প্রধান ছিলেন। টিমের অন্য দুই সদস্য ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এনামুল হক ও ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ডা. এমদাদুর রহমান।
ময়নাতদন্ত শেষে টিমের প্রধান মনসুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘সন্দেহভাজন দিকের পরীক্ষা-নীরিক্ষা করার জন্য সব আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। যেমন- পাকস্থলিতে বিষ আছে কিনা, কোনো ড্রাগস ছিল কিনা- এগুলো জানতে ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। রক্ত নেয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই সব ফলাফল বিস্তারিত জানানো হবে।’
হত্যার কোনো আলামত পেয়েছেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অধ্যাপক মনসুর রহমান বলেন, ‘না।’ তাহলে এটা ভবিষ্যতে হত্যার দিকে যাবে কিনা, জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘কখনোই নয়’।
তবে লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেই সবকিছু স্পষ্ট করে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
ডা. মনসুর রহমান আরো জানান, ভিসেরা পরীক্ষা হবে ঢাকার মহাখালীতে। ভিসেরা প্রতিবেদন আসলে পুর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য,শনিবার সকালে আরএমপির অফিসার্স মেসের নিচতলার একটি কক্ষে গ্রিলের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় এসি সরফরাজের লাশ দেখতে পান সহকর্মীরা। বিকালে পরিবারের সদস্যরা সেখানে গেলে ঘরের দরজা ভেঙে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সন্ধ্যায় সুরতহাল শেষে সরফরাজের লাশ রামেক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছিল। রোববার দুপুরে তার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
এসি সরফরাজ ৩১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি আরএমপির রাজপাড়া থানা জোনের এসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাবা এম ওবাইদুল্লাহ আরএমপির কমিশনার ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাবুপুরে।
নিহত এসি সরফরাজের চার বছরের একটি মেয়ে আছে। তার স্ত্রী সুলতানা নাসরিন সূচনা একজন চিকিৎসক। নগরীর উপশহরে নিজেদের বাসায় থাকতেন এই দম্পতি।
পুলিশ বলছে, এসি সরফরাজ মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে যেতেন ওই অফিসার্স মেসে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টায় ডিউটি শেষে ভোর ৫টার দিকে অফিসার্স মেসে যান তিনি। এরপর তিনি আত্মহত্যা করেন।
এদিকে রোববার ময়নাতদন্তের পর লাশ আবারো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তার লাশ নেয়া হয় রাজশাহী মহানগর পুলিশ লাইনে। সেখানে প্রথম জানাযা শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকালে নগরীর টিকাপাড়া গোরস্থানে দ্বিতীয় জানাযা শেষে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
রাজপাড়া থানার কর্তব্যরত অফিসার তসলিমা খাতুন জানিয়েছেন, এসি সরফরাজের মৃত্যুর ঘটনায় এই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে মামলাটি দায়ের হয়। সংবাদদাতা হিসেবে এসি সরফরাজের বাবা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এম ওবাইদুল্লাহর নাম রয়েছে।
শনিবার বিকালে লাশ দেখতে গিয়ে এম ওবাইদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরফরাজের আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই।’
