নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ):
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়নের ডাকুয়ার ও ছন্দোয়ার হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতায় ডুবছে হাওর। শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষক।
মোহনপুর ইউনিয়নের উজান রামনগরে জোয়ালভাঙ্গা হাওররক্ষার নামে একটি অপরিকল্পিত বাঁধ গ্রামকে বাইরে রেখে করায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বাড়ির সামনের মাঠে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় হাওর থেকে কেটে আনা ধান শুকাতে পারছেন না কৃষক।
এদিকে একই হাওরকে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ দিয়ে আলাদা করায় এখন জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে মনে করেন কৃষকরা। জলাবদ্ধতার শিকার এক অংশের কৃষক নিজেদের পাকা ধান বাঁচাতে রাতের আঁধারে বাঁধ কেটে দেওয়ার আশঙ্কায় একই হাওরের পার্শ্ববর্তী অংশের কৃষক রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। শুধু মোহনপুর ইউনিয়নেই নয় রঙ্গারচর ইউনিয়নেরও একাধিক বাঁধের কারণে লালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
কৃষক ও এলাকাবাসী জানান, সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়নের ডাকুয়ার হাওরে এ বছর হাওররক্ষা বাঁধে প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুই ইউপি চেয়ারম্যান সদর উপজেলার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহানকে ম্যানেজ করে একাধিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে নিজেদের পছন্দের লোকদের পিআইসিতে যুক্ত করেন। বাঁধের কাজে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে ওই সময় এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছিল।
জানা যায়, এই হাওরে বড় অংকের বরাদ্দ দেওয়া হলেও মোহনপুর-কান্দাগাঁও সড়কে পানি নিষ্কাশনের খাড়া (ছোট নালা) থাকলেও সেখানও ভরাট করা হয়। এসময় স্থানীয় কৃষকরা পাকা গোলাকার কয়েকটি রিং সড়কে দেওয়ার প্রস্তাব করলে পিআইসি’র লোকজন কৃষকদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এখন বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন দিক থেকে হাওরে পানি ঢুকছে। বিশেষ করে কান্দাগাঁও অংশ দিয়ে ছন্দোয়ার হাওরে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বুক সমান পানিতে নেমে কৃষকরা ধান কেটেছেন। পানি ক্রমাগত বাড়ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
ছন্দোয়ার হাওরের পানির চাপ কমাতে ডাকুয়ার হাওরের মূল অংশের মোহনপুর কান্দাগাঁও বাঁধ কেটে দিয়ে উত্তরপূর্বাংশের কৃষকরা পানি নিষ্কাশন করতে পারেন এই আশঙ্কায় এই বাঁধে গত রাত থেকে পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা।
মোহনপুর ইউনিয়নের উজান রামগরে একটি বাঁধের প্রাক্কলন ও ডিজাইন নিয়ে শুরুতেই প্রতিবাদ করেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু স্থানীয় পিআইসি ও পাউবো’র উপসহকারি প্রকৌশলী পাত্তা না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ বাস্তবায়ন করেন। বেড়িবাঁধের কথা বলে গ্রামকে বেড়ির বাইরে রেখে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করায় এখন উজান রামনগরের একটি অংশে বৃষ্টিপাতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কয়েকটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারছেনা। তারা যে স্থানে ধান শুকাতো জলাবদ্ধতার কারণে সেটিও এখন জলমগ্ন। এ অবস্থায় উজান রামনগরের ১০-১৫টি পরিবার চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল আহমদ বলেন, অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে উজান রামনগর গ্রামের অর্ধেক মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। হাওর থেকে যে ধান কেটে এনে খলায় রেখেছিল সেই খলাও ডুবে গেছে। মানুষজন ধান শুকাতে পারছেনা। ভোগান্তিতে পড়েছে তারা।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সদর উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শামছুজ্জামান সায়েম বলেন, ডোবরার পানিতে ছন্দোয়ার হাওরে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে ডাকুয়ার হাওরপাড়ের পশ্চিমাংশের কৃষকরা এখন রাত জেগে বাঁধে পাহারা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ছন্দোয়ার হাওর তলিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বুক সমান পানিতে ধান কেটেছেন কৃষক।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, শুরুতে আমরা অপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু বাঁধের অভিযোগ পেয়েছিলাম। তবে এখন এ কারণে কোথাও কোন সমস্যা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নেব।
