রাজু আনোয়ার : বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ যাত্রাপালা। আর এই `যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি গ্রহণ করেছে বেশ কিছু কার্যক্রম । তারই ধারাবাহিকতায় যাত্রাশিল্পের নবযাত্রা শীর্ষক ৫টি নতুন যাত্রা প্রযোজনা নিয়ে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘যাত্রা উৎসব ২০১৯’। ২৪-২৬ এপ্রিল একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে যাত্রা উৎসব ও ‘যাত্রাপালার বিবেক’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী কর্মশালা । থাকছে যাত্রাশিল্পী সম্মাননা প্রদানের আয়োজনও ।
গতকাল ২৪ এপ্রিল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি এবং বিশিষ্ট নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মঞ্চসারথি আতাউর রহমান।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক মো: বদরুল আনম ভূঁইয়া। উদ্বোধনী আয়োজনে যাত্রাপালার গান পরিবেশন করেন একাডেমির কণ্ঠশিল্পীরা। যাত্রাপালার গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে যাত্রা শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনজন যাত্রাশিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্ত শিল্পীরা হলেন- ভিক্টর দানিয়েল, গৌরাঙ্গ আদিত্য এবং সুলতান সেলিম।
উদ্বোধনী আলোচনা শেষে সন্ধ্যা ৭টায় প্রদর্শিত হয় মিলন কান্তি দে রচিত ও নির্দেশিত এবং দেশ অপেরা প্রযোজিত যাত্রাপালা ‘এক যে ছিল মহারানী’। এরপরই পরিবেশিত হয় মামুনুর রশীদ রচিত ও হাবিব সারোয়ার নির্দেশিত পালা ‘দ্বীপের নাম আন্ধার মানিক’। যাত্রাপালাটি প্রযোজনা করেছে যাত্রাদল জয়যাত্রা।একই আবহে আজ ২৫ এপ্রিল প্রদর্শিত হবে ২টি যাত্রাপালা।
যার একটি হচ্ছে পালাকার শ্যামল দত্তের যাত্রাপালা ‘দুই বিঘা জমি’। লোক নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত পালাটি নির্দেশনা দিয়েছেন তাপস সরকার। আজ প্রদর্শিত হতে যাওয়া অপর পালাটি হচ্ছে ‘সোহরাব রুস্তম’। পালাকার ড. আমিনুল ইসলাম রচিত এই পালাটি প্রযোজনা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং নির্দেশনা দিয়েছেন রেজা আরিফ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দেশজ ও আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির লালন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নাটক, পাপেট, চলচ্চিত্র, যাত্রা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে বেশকিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম যাত্রাপালা। যাত্রাপালা আমাদের দেশের সুদূর অতীতে গ্রামে সুরুচিপূর্ণ ও আকর্ষনীয় বিনোদন হিসেবে দর্শককে বিপুল আনন্দ প্রদান করতো এবং বিনোদনের অন্যতম শিল্প মাধ্যম ছিলো যাত্রাপালা। যাত্রাপালার পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষে ও যাত্রা শিল্পকে দর্শকনন্দিত করার জন্য শিল্পকলা একাডেমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র পরিকল্পনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ২০১২-১৩ অর্থ বছরে দেশের ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমির অংশগ্রহণে ৭৬টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় নাট্যোৎসব’, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে দেশের ৬৪ জেলার অংশগ্রহণে আয়োজন করে ‘স্বপ্ন ও দ্রোহের নাট্যোৎসব’, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দেশের ৬৪টি জেলা শিল্পকলা একাডেমি অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ‘সাহিত্য নির্ভর জাতীয় নাট্যোৎসব’ এবং মানুষের প্রয়োজনীয়তা ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতকে সামনে রেখে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মূল্যবোধের নাট্যোৎসব আয়োজন করে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে জেলা-ভিত্তিক কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ অবলম্বনে নির্মিত হয় ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাটক।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৬৪ জেলায় নির্মিত হচ্ছে দেশীয় যাত্রাপালা। এছাড়াও আগামী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে নির্মিত হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৬৪টি নাটক। শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল বাংলাদেশ গড়ার এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পথে ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যাত্রাশিল্প হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
