স্বাস্থ্য-কৃষি খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার অনুরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের উন্নয়নে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, দুর্যোগ ও মানবিক সহায়তা কর্মসূচির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্বল্প সুদে ঋণসহ নানামুখী সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলারের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি ও সহযোগীতা বিষয়ক এক ফোনালাপনে এ অনুরোধ জানান তিনি।

এ সময় অর্থনীতি ও সমাজের ওপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য পরিসেবা, সক্ষমতা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য সমর্থন বাড়ানো, পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা নেট প্রোগ্রাম প্রশস্তকরণে সমর্থন ও উন্নয়নের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে সক্ষম কৃষি যান্ত্রিকীকরণের অর্থায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তার অনুরোধ জানান।

মুস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস আঘাত হেনেছে। এ ভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। এ মহামারির কারণে সব থেকে বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে এশিয়ার উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্থ স্বল্প আয়ের মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। ২০১৩ সালে আমাদের জিএসপি সুবিধা স্থগিত হয়েছে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি (টিকফা) স্বাক্ষরিত হয়, যদিও অগ্রাধিকারযোগ্য বাজারে প্রবেশের সমস্যা এখনও মীমাংসিত হয়নি। কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে সৃষ্ট বাণিজ্য ও অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অগ্রাধিকারযোগ্য বাজারে প্রবেশাধিকার এবং বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি বলেন, বর্তমানে জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোটখাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত। করোনার প্রভাবে আমাদের আমদানি-রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং স্থবিরতা নেমে এসেছে রেমিটেন্স প্রবাহে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ১১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা জিডিপি’র ৩.৫ শতাংশ। এই প্যাকেজের অর্থ ব্যয়ে জনসাধারণের ব্যয় বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা জালকে প্রশস্ত করা এবং আর্থিক সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, পরিসেবা খাত এবং কুটির শিল্পগুলোকে রক্ষার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কার্যনির্বাহী মূলধনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এসময় প্রকল্প সহায়তা, খাদ্য সহায়তা এবং পণ্য সহায়তা হিসেবে এ যাবৎ ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার জন্য এবং কোভিড-১৯ প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ামূলক কর্মসূচিতে ৩.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরুরি সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান অর্থমন্ত্রী।

অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার এসময় করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। যুক্তরাষ্ট্র এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। এসময় স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রতিশ্রুতিও দেন আর্ল মিলার। মিলার ইউএস এক্সিম ব্যাংকের নতুন কিছু সুবিধা সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এক বছরের জন্য প্রদত্ত এ সুবিধার আওতায় রয়েছে সরাসরি ঋণ বা ঋণ গ্যারান্টি, সাপ্লাই চেইন অর্থায়ন গ্যারান্টি, কার্যনির্বাহী মূলধন গ্যারান্টি এবং প্রি ডেলিভারি/প্রি এক্সর্পোট অর্থায়ন সুবিধা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেয়ারবাজারে লেনদেন চালু ১০ মে
পরবর্তী নিবন্ধশ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক রেখে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী