নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ
৫০ দম্পতির মধ্যে কেউ একে অপরকে ভালোবেসে, কেউ আবার পারিবারিক সিদ্ধান্তে একসঙ্গে জীবন শুরু করেছিলেন। দু’জনের মধ্যে গভীর ভালোবাসাও ছিল। কিন্তু পারিবারিক কলহ, ভুল বোঝাবুঝি, যৌতুক, নির্যাতনসহ বিভিন্ন কারণে সংসার নামক জগৎ থেকে উড়ে যায় সুখপাখি। সালিশে সমস্যার সমাধান না হওয়ায় দাম্পত্যের ছন্দপতন ঘটে। এক পর্যায়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায় তাদের কলহ।
এমন ৫০ দম্পতিকে আবারও সংসারের বন্ধনে ফিরিয়ে দিলেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। যুগান্তকারী এই রায় অর্ধশত নারী-পুরুষকে আবারও একসঙ্গে জীবন কাটানোর সুযোগ করে দিলো। হাসি ফোটলো তাদের সন্তানদের মুখে।
জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নিজেদের স্বামীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মামলাগুলো করেছিলেন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৫০ নারী। এরকম ৫০ দম্পতিকে সুখী জীবনে ফেরানোর প্রয়াস নেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। কোনো আসামিকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংসার জীবন চালিয়ে যাওয়ার শর্তে বাদীদের সঙ্গে আপোস করিয়ে দেন।
মঙ্গলবার দুপুরে আদালত এই রায় দেন। এসময় সকল মামলার বাদী-বিবাদী, তাদের আইনজীবী ও পরিবারের লোকজন উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন। আবেগে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানিও ঝরান।
আদালতের আপোসনামায় ৫০ দম্পতি অঙ্গীকার করেন, সন্তানাদি নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করবেন তারা। সংসারে শান্তি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করবেন না। স্বামী-স্ত্রী উভয়কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেবেন। স্বামী তার স্ত্রী বা তার মা-বাবা ও অভিভাবকের কাছে যৌতুক দাবি করবেন না। পারিবারিক বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য ও বিরোধ দেখা দিলে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করবেন। স্বামী কখনো স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না, স্ত্রীকে নির্যাতন করলে বা যৌতুক দাবি করলে স্ত্রী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নান্টু রায় বলেন, আদালত পৃথক ৫০টি নারী-শিশু নির্যাতন দমন মামলায় একসঙ্গে যুগান্তকারী একটি রায় দিয়েছেন। আদালতে যে শুধু শাস্তি হয় না পরিবারে শান্তিও ফেরানো হয়।
