শিশু ধর্ষণের মূল্য ১০ হাজার টাকা

নুর উদ্দিন, ছাতক (সুনামগঞ্জ):

শিশু ধর্ষণের মূল্য ১০হাজার টাকা। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে প্রথম শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রীকে (৭) ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গ্রাম্য মাতব্বররা শালিসের নামে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ধর্ষককে দায় মুক্তি দেয়া হয়েছে।  উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পিরিজপুর গ্রামে শিশু ধর্ষণের মাতব্বরদের রায়ের বিষয়টি জানাজানির পর সর্বত্র তোলাপাড় শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পিরিজপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের ৭ বছরের ওই শিশুটি গত ২১ এপ্রিল বিকালে একই গ্রামের প্রভাবশালী প্রতিবেশী উপানন্দ দাসের বখাটে ছেলে নয়ন দাস (২১) মোবাইল ফোনে গান শোনানোর প্রলোভন দেখিয়ে শিশুটিকে গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করে। পরে শিশুটি বাড়ি এসে পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছে ঘটনা খুলে বলে। ঘটনা ধামচাঁপা দিতে নয়নের পরিবার ও স্বজনেরা গ্রামের একদল মাতব্বরদের দিয়ে রাতেই ওই শিশু কন্যার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা গ্রহন ও আইনি সহায়তা নিতে বাধা সৃষ্টি করে চিকিৎসার জন্য গ্রামের হোমিও প্যাথিক এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। গ্রামের চিকিৎসক অপারগতা প্রকাশ করলে সেখান থেকে রাতেই সুনামগঞ্জ শহরে একটি প্রাইভেট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে শিশুটিকে গোপনে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসা হয়।
অপরদিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য পাখি বাবু, বোরহান উদ্দিন, নিরু দাস, নানির উদ্দিন, আজির উদ্দিন কথিত শালিসগণ গত ২৫ এপ্রিল গ্রামের পিরিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় গ্রাম্য মাতব্বর মন্টু ভট্রাচার্য্যরে সভাপতিত্বে শালিসে বসেন। সালিশে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল হেকিম, ভিকটিম, ভিকটিমের পরিবাররসহ গ্রামের শতাধিক লোকজনের উপস্থিত থাকলেও অভিযুক্ত নয়ন দাসকে উপস্থিত করা হয়নি। ওই শালিসে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় নয়নকে দোষী সাবাস্থ্য করে ভিকটিমের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা ‘ক্ষতিপূরণ’ দেয়ার রায় দেন মাতব্বররা।
ভিকটিমির হত দরিদ্র পিতা-মাতা জানান, শিশু কন্যার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রস্তুতি নিলেও গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ কয়েকজন গ্রাম্য মাতব্বর বারবার বাঁধা প্রদান করেছেন। গ্রাম্য শালিসদের রায় প্রত্যাখ্যান করেছি।
ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান রনজিত চৌধুরী রাজন জানিয়েছেন, ধর্ষণের মতো ঘটনা আইন- আদালত ব্যতিত গ্রাম্য শালিসে বিচারের এখতিয়ার নেই।
বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি (তদন্ত) নব গোপাল দাস বলেন, শুরুতে এ বিষয়টি থানা পুলিশকে কেউ অবহিত করেনি। রোববার সকালে লোকমুখে শিশু ধর্ষণের ঘটনাটি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ভিকটিমকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতেই হবে ভারতকে’
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন বুধবার