আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে সরকার গঠনে একাধিক চমক নিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদি।নতুন সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে এক কচুশাক বিক্রেতাকে বেছে নিয়েছেন তিনি।
কচুশাক বিক্রেতা ওই প্রতিমন্ত্রীর হলেন-আসামের ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা রামেশ্বর তেলি। দিনের একবেলা খাবার জোগাতেই যিনি এক সময় জঙ্গল থেকে কচু-ঢেঁকিশাক তুলে তা বাজারে বিক্রি করতেন।
গত শুক্রবার আসাম প্রদেশের ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা রামেশ্বর মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছেন। এর পরই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে তার জীবনকাহিনী।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, খুব অভাবে কেটেছে রামেশ্বর তেলির ছোটবেলা।বাবা সামান্য চা শ্রমিক ছিলেন। ডিব্রুগড়ের চা বাগানের ঘরে ভাই, দুই বোন নিয়ে মোট ছয়জনের বসবাস। বাবার টাকায় ঠিকমতো একবেলা খাবার জুটত না তাদের।
১২ বছর বয়স থেকেই নিজেদের খাবার খরচ নিজেই উপার্জন করতে শুরু করেন রামেশ্বর। দুবছরের ছোট ভাই গুণেশ্বরকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন জঙ্গল থেকে কচু আর ঢেঁকি শাক কেটে নিয়ে আসতেন। সেগুলো বিক্রি করে রুটি কেনার পয়সা জোগাড় করতেন। বাবার মৃত্যুর পর তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। তখন মা, ভাই এবং দুই বোনের সংসারের হাল ধরতে হয় রামেশ্বর তেলিকে।তাই পড়াশোনা বিশেষ করে উঠতে পারেননি।
রোজগারের জন্য বাড়ির কাছেই একটি পানের দোকান দিয়েছিলেন রামেশ্বর তেলি। সেখান থেকে যা উপার্জন হতো তাতে সংসার চলতো। একটু একটু করে সেই টাকা জমিয়ে দুই বোনের বিয়েও দেন।
কলেজে পড়ার সময় রামেশ্বর আসামের চা জনগোষ্ঠী ছাত্র সংস্থায় (আটসা) যোগ দেন। আটসা নেতা তেলির জনপ্রিয়তা ও নেতাসুলভ গুণ নজরে পড়ে বিজেপি নেতাদের। ২০০১ সালে দুলিয়াজান থেকে বিজেপি বিধায়ক হন রামেশ্বর।২০০৬ সালেও বিধায়ক হন।
তবে ২০১১ সালে হেরে যান। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের পাঁচবারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনসিংহ ঘাটোয়ারকে ১ লাখ ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়ে তাক লাগান তিনি।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পবনসিংহই তার প্রতিপক্ষ ছিলেন। ২০১৪ থেকে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে তাকে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৬ ভোটে হারিয়েছেন রামেশ্বর। যা আসামের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধান। বিপুল জনভোট, আর রামেশ্বরের জনপ্রিয়তার জন্যই তাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করেন মোদি।
রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও রামেশ্বরের জীবনযাপন কিন্তু তেমনটাই রয়েছে। তার মা, ভাই এখনো চা বাগানের সেই দরমার ঘরেই থাকেন। এমনকি নিজের কথা এখনো ভেবে উঠতে পারেননি রামেশ্বর। তাই ৪৯ বছর বয়স হলেও নিজের সংসার গোছানো হয়ে ওঠেনি তার।
বৃহস্পতিবারে ছেলেকে শপথ নিতে দেখে গর্বে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন রামেশ্বরের মা। এখন শুধু একটাই ইচ্ছা, রামেশ্বরের বিয়ে। এর মধ্যে পাত্রী খোঁজাও নাকি শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
