নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শামীম আহমেদ। বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। বাবা মৃত বদর উদ্দিন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী। তিনি ৫নং সেক্টরে সেলা সাব-সেক্টরের ক্যাপ্টেন হেলালের অধীন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা এফএফ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতিস্বরূপ কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী কর্তৃক স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ গ্রহণ, ভারতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম ওঠাসহ মুক্তিবার্তায় বদর উদ্দিনের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অংশ না নেয়ায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হতে পারেননি তিনি। ফলে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয় তাঁকে। এছাড়া সরকার কর্তৃক সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বদর উদ্দিনের পরিবার। বাবা বদর উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও ভাতা প্রাপ্তির জন্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস, উপজেলা সমাজসেবা অফিস, জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়েও যেতে হয়েছে তাঁর ছেলে শামীম আহমদকে।
জানা যায়, শামীম আহমদ তার পিতার নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন করেন। ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি কি মতামত দিয়েছে জানতে পারার জন্যে নির্দেশনা দেয় সংশ্লিষ্টদের। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে ভাতা প্রাপ্তির জন্য আবেদন করেন শামীম। শামীমের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সফি উল্লাহ আবেদনটি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন জমা দিতে সমাজসেবা অফিসারকে নির্দেশনা দেন। ১৪ মার্চ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন সমাজসেবা অফিসার। এই প্রতিবেদনে দাখিলকৃত আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত কাগজপত্রে ৪টি বিবেচ্য বিষয় অনুপস্থিত থাকায় প্রতিবেদনের আলোকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা পুত্র শামীমকে নির্দেশনা দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সফি উল্লাহ। পরবর্তীতে ভাতা প্রাপ্তির জন্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন শামীম। মন্ত্রণালয় থেকে শামীমকে বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা বদর উদ্দিনের ভাতা প্রাপ্তির বিষয় সম্পর্কে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে নোটিশ পাঠানো হবে। এই নোটিশের অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
শামীম জানান, বিধবা মা শামেনা বেগম, তিন ভাই ও দুই বোন, স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনো ভাবে দিনাতিপাত করতে হয়। গ্রামের বাজারে টুকটাক স্বর্ণালঙ্কারের কাজ করে চলছে শামীমদের পরিবার। সরকার মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলেও বাবা বদর উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না পাওয়ায় এসব কিছু থেকে বঞ্চিত রয়েছে পরিবার। তাই বাবা বদর উদ্দিনের নাম মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন শামীম।
শামীম বলেন, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সময় ৫নং সেলা-সাবসেক্টরের ক্যাপ্টেন হেলালের অধীনস্ত কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার খুরশেদ ও পরবর্তীতে শহীদ চৌধুরীর অধীনে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি স্বরূপ কর্নেল ওসমানীর কাছ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ লাভ করেন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে মুক্তিবার্তায়ও বাবার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাবার নামে মুক্তিযোদ্ধা অধিদপ্তর থেকে দেয়া পরিচয়পত্র আমাদের কাছে আছে। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের সময় বাবা এলাকায় না থাকায় গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। গেজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্যে ২০১৪ সালে অনলাইনে আবেদন করি। এখন পর্যন্ত এর কোনো সুরাহা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির জন্যে ইউএনও অফিস থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা দিলেও আমরা এসব থেকে বঞ্চিত আছি। পরিবার নিয়ে খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সফিউল্লাহ বলেন, গেজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্যে উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করা হলে বদর উদ্দিন কোনো আবেদন করেননি। মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে ভাতা প্রাপ্তির জন্যে আবেদন করেছেন। বদর উদ্দিনের নাম গেজেটভুক্ত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের এ ব্যাপারে কিছু করার নেই। তবে আগামীতে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা হালনাগাদ হয় তখন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
