ট্রাম্পের নীতির কারণে ভাঙনের মুখে জি-৭

পপুলার২৪নিউজ ডেস্ক:

কানাডার লা মালবে শহরে জি-সেভেন শীর্ষ বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে একজোট হচ্ছে স্বাগতিক দেশটি ও ইউরোপ৷ ট্রাম্প নিজেও সংঘাতের পথে যেতে প্রস্তুত৷

ফলে বিশ্বের শীর্ষ সাত শিল্পোন্নত দেশের জোট জি-সেভেন ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন এতকাল নানা গোষ্ঠীর প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে পড়ত৷ এবার সেই সঙ্গে সদস্য দেশগুলোর মধ্যেই যে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, তা সত্যি তুলনাহীন৷

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আওতায় বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন৷

জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ তুলে ধরে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর বাড়তি শুল্ক চাপিয়ে তিনি প্রবল সমালোচনার পাত্র হয়েছেন৷

গাড়ি আমদানির ওপরেও তিনি শুল্ক চাপানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কাটাতে প্রয়োজনে তিনি আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত৷

আয়োজক দেশ কানাডা ও ইউরোপ ট্রাম্পকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, তারা এই ভয়ভীতির সামনে নতিস্বীকার করবে না৷ তারা একযোগে ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতার ইঙ্গিত দিয়েছে৷

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ইংরেজি ভাষায় লেখা এক টুইটবার্তায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট একঘরে হয়ে থাকতে হয়তো প্রস্তুত৷ কিন্তু বাকি নেতারাও প্রয়োজনে ছয় দেশের আলাদা চুক্তি করতে প্রস্তুত৷

তার মতে, এই ছয় দেশ কিছু মূল্যবোধ ও এক অর্থনৈতিক বাজারের প্রতিনিধিত্ব করে৷ ঐতিহাসিকভাবে এই জোট এক আন্তর্জাতিক শক্তি হয়ে উঠেছে, বলেন ম্যাঁক্রোন৷

ট্রাম্প এমন বার্তার জবাব দিতে বিলম্ব করেননি৷ তিনি এক টুইটবার্তায় মন্তব্য করেন, ‘দয়া করে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো ও প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রনকে বলুন, তারা আমেরিকার ওপর বিশাল পরিমাণ শুল্ক চাপাচ্ছেন এবং আর্থিক নয়, এমন অনেক বাধা সৃষ্টি করছেন৷’

এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প মনে করিয়ে দেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বৃত্তের মাত্রা ১৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার৷ কানাডাও মার্কিন কৃষিপণ্য ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করে না৷ জি-সেভেন সম্মেলনে তিনি এসব বিষয় তুলে ধরার ইঙ্গিত দিয়েছেন৷

এমন প্রেক্ষাপটে অনেকে জি-সেভেন কাঠামোয় ভাঙনের আশঙ্কা করছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রকে বাইরে রেখে জি-সিক্স প্লাস ওয়ান নামে এক কাঠামোর কথাও শোনা যাচ্ছে৷

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল আশঙ্কা করছেন যে, দুদিনের সম্মেলনের শেষে যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে ঐকমত্য সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে৷ তবে আপসের বদলে মতপার্থক্য মেনে নিয়ে ঘোষণাপত্র না প্রকাশ করাই সততার পরিচয় হবে বলে তিনি মনে করেন৷

এ মুহূর্তে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনের তুলনায় ট্রাম্প আগামী সপ্তাহে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলন নিয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন৷

ওয়াশিংটনে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেন৷ জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন শেষ হবার আগেই শনিবার সকালে তিনি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হবেন৷

জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রোন ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত স্তরে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তার মতবদল করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এবারের সম্মেলনে খোলামেলাভাবে ট্রাম্পের বিরোধিতা করতে দেখা যাবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে৷

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ট্রাকচাপায় দুই নারীসহ চারজন নিহত
পরবর্তী নিবন্ধআর কত সুবিধা চান সরকারি চাকুরেরা : অর্থমন্ত্রী