“তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সারা দেশে দুর্ঘটনার ঝুঁকিমুক্ত সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার যে দাবি উঠেছিল দীর্ঘ ছয় বছরেও তা পূরণ হয়নি। সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। এ কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণহানি ঘটছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহায় যাত্রী হয়রানি বন্ধসহ দুর্ঘটনা ও বিড়ম্বনামুক্ত সড়ক নিশ্চিত করতে হবে। ”
শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীরের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। সমাবেশে জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, সেকেন্দার হায়াৎ, পূষ্পেন রায় এবং জসি সিকদার বক্তব্য দেন। এ সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে আশীষ কুমার দে বলেন, “সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায়। এই নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা সরকারের। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর দেশব্যাপী এই দাবি আরো জোরালো হয়েছিল।
কিন্তু প্রতিদিন যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটছে, তাতে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। ” তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা হ্রাসসহ একটি পরিবেশসম্মত জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে নিয়ে জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন। “বক্তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা শুধু অকালে বহু মানুষের প্রাণই কেড়ে নিচ্ছে না; জাতীয় অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। একইভাবে দুঃসহ যানজটের কারণে প্রতিদিন বহু কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ফলে সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্ঘটনা ও যানজট কমাতে তারা সড়ক পরিবহন খাতকে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক আশফাক মুনীরসহ (মিশুক মুনীর) পাঁচজন নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হন। তাদেরকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গাগামী বেপরোয়া গতির একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত মার্চে ঘাতক বাসটির চালককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন মানিকগঞ্জের একটি আদালত।
