আগামী অর্থবছরে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি চূড়ান্ত

সাইদ রিপন: পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায় আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বর্ধিত সভায়। বর্ধিত সভার তথ্যানুযায়ী, বরাদ্দের দিক থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে পরিবহন খাত। বিদ্যুৎ, ভৌত অবকাঠামোর পরই সর্বোচ্চ বরাদ্দের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে শিক্ষা ও ধর্ম খাতও।

বুধবার (৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে এই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে তিনি জানান, আজ বর্ধিত সভায় এডিপির এই আকার গ্রহণ করা হয়েছে। এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় উপস্থাপন করা হবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এডিপির পরিমাণ ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার মধ্যে স্বায়স্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়া সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বিদেশিরদের কাছ থেকে ঋণ নেয়া হবে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

এডিপির অগ্রগতির চিত্র তুলে মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বর্তমান এডিপির অগ্রগতি এপ্রিল পর্যন্ত ৫৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। টাকায় যার পরিমাণে ৯৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। গত বছর এই সময়ে এডিপির অগ্রগতি ছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ। টাকায় যার পরিমাণ ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।’

এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন কোন খাতে কত বরাদ্দ সেই তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, পরিবহন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা।

বরাদ্দ গুরুত্বের বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘সব খাতকেই সমান প্রাধান্য দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কৌশলে ২০০৯ সাল থেকে অসম্ভব রকমের উন্নয়ন করতে পারেছেন। সেই কৌশল থেকে সরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আমাদের হাতে নেই। কারণ সেটা বাস্তবসম্মত হবে না। সুতরাং এটা ভালো, কেন আমরা এটা বদলাতে যাব।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা – এই চারপাঁচটা ক্ষেত্রে আমরা ঘুরাফেরা করছি। কারণ এগুলো আমাদের ভালো ফল দিয়েছে।’

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া উপরের চার খাতের পরেই বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট এডিপির ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা এডিপির ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, যা এডিপির ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬ ১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যা এডিপির ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পানি সম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা এডিপির ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জনপ্রশাসন খাতে ৫ হাজার ২৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা এডিপির ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রিতা ভাঙার জন্য নতুন কোনো পদক্ষেপ থাকছে কি না জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘এই ট্রেন্ড ভাঙার জন্য আমরা চেষ্টা করেই যাচ্ছি। আইএমইডিকে শক্তিশালী আরও করা হবে। আমাকেও আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মাঠে যে প্রকল্প পরিচালকরা আছেন, তাদেরকে অনেক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। আমার মনে হয়, তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি গ্রামে থাকছে। আমরা আশা করি বড় ফল পাবেন। আপনারা এ বছর শেষ হলে চমকপ্রদ সংবাদ পাবেন।’

এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের ফিজিক্যাল অগ্রগতি অনেক বেশি। তবে টাকাই হলো রিয়েল রিফ্লেকশন অব এক্সপেনডিচার। আমরা ভীত নই। কারণ আগের বছরও আমরা একইভাবে এসেছি। এ বছর আমরা উন্নতি করেছি। ভয় মোটেও পাচ্ছি না। কারণ আমরা জানি, অনেক বিল পে হয় নাই। অ্যাকাউন্ট অফিসে ঝুলে আছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধরমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ: রিজভী
পরবর্তী নিবন্ধকারাগারে দগ্ধ আইনজীবীর মৃত্যু : বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ